চাকরি দিতে পারলে তো আর ছাত্ররা আন্দোলন করতো না
নুরুল আনোয়ার
ছাত্রদের দাবী কোটা সংস্কার নিয়ে। তার কারণ হচ্ছে, আমাদের সন্তানদের মধ্যে শিক্ষিতদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু তার তুলনায় সে পরিমানে চাকরীর ব্যবস্থা নেই। যদি চাকরীর ব্যবস্থা অনেক বেশি হতো, তবে এ কথাগুলো বা দাবী গুলো আসতই না। যদি সরকারীভাবে বা বেসরকারী ভাবে কিংবা অন্য কোন ভাবে অনেক পদ সৃষ্টি হতো, তাহলে এমন প্রশ্ন আসতো না। আমি মনে করি, সবাইকেই সক্রিয় হওয়া দরকার। কর্মসংস্থান কিভাবে বৃদ্ধি করা যাবে, সেটা চিন্তা করা দরকার। যদি কর্মসংস্থান আরো পঞ্চাশ গুণ বাড়ানো যায়, তাহলে কারো কোন অসঙ্গতি থাকার কথা না। সবারই প্রথমে লক্ষ রাখা দরকার, আমাদের কর্মক্ষেত্রের সুযোগ সৃষ্টি করা, বিশেষ করে আমাদের ছেলে মেয়েরা যারা লেখাপড়া শেষ করবে, তাদের যেন বেকার জীবনে যেতে না হয়। শুধু সরকারী চাকরিতেই নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে, বেসরকারী ক্ষেত্রেও নতুন নতুন নিয়ম ও পদ্ধতি বের করা দরকার এবং সেটাই আমি মনে করি বেশি জরুরী। সরকার দাবীর মুখে হোক কিংবা যে কোনভাবেই হোক কোটা ব্যবস্থাকে সংকুচিত করলো, তবেই কি এই বিপুল সংখ্যক বেকারের চাকরী হবে? হবে না। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দেশে এত বেশি, কোটা উঠিয়ে দিলেও তো সবাইকে চাকরী দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। অনেক পদ সৃষ্টি করা, যাদের চাকরীর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাদেরকে কন্টাক্টে না দেওয়া। সরকারি পদ গুলোকে বাইরে থেকে চুক্তিভিত্তিতে লোক না আনা। তাহলে, নিচের পদ গুলোর লোকেরা উপরে উঠবে এবং নতুন পদ খালি হবে এবং নিয়োগ পাবে। এ ছাড়াও সরকারী চাকরী এবং সরকারী চাকরির বাইরেও আরো নতুন কোন চাকরীর সুযোগ সৃষ্টি করা যায় কিনা, সেটা নিয়েও আমাদের খুব চিন্তা এবং দ্রুত কাজ করা দরকার। ব্যাংক গুলো ছাড়াও আরো যে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোতে আমাদের তরুণ সমাজকে কিভাবে নিয়োগ দেওয়া যায় সেটা ভাবতে হবে। লেখাপড়া শেষ করা শিক্ষিত তরুণ সমাজকে তো বেকার ফেলে রাখা যাবে না। এদেরকে কোন একটা কাজ দেওয়া গেলে তো আর আন্দোলন টা আসতো না। কোটা সংস্কার তো এই সমস্যার সমাধান করবে না। হয়ত কিছু নিয়োগ হতে পারে কিন্তু সমস্যার তো আর স্থায়ী সমাধান করবে না। শুধু কোটা প্রথা উঠিয়ে দিলেই কি এত বিপুল সংখ্যকের চাকরী হবে? ছাত্রদের কর্মসংস্থানের জন্যই তো এই আন্দোলন। আমি মনে করি, এই আন্দোলন নিয়ে আলোচনা এবং বিবেচনা করার সুযোগ আছে। এটাকে বিবেচনার বাইরে নেওয়া ঠিক হবে না। এবং এটাকে রাজনীতিকরণ করাও ঠিক হবে না। তাইতো প্রধানমন্ত্রী একটি ঘোষণা দিয়েছেন। তারা তো আমাদেরই সন্তান। তাদের ভবিষ্যৎ ও কর্মসংস্থান নিয়ে তো আমাদেরই ভাবতে হবে। আমরা তো একটি স্বাধীন দেশের জনগণ, আমাদের সকল দাবী দাওয়া সরকারের নিকট থেকে আদায় করে নিতে হবে।
পরিচিতি : সাবেক আইজিপি, বাংলাদেশ পুলিশ/মতামত গ্রহণ : মাহবুবুল ইসলাম/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ