আমদানি করা চিনির উপর শুল্ক বসাবে শিল্প মন্ত্রণালয়
স্বপ্না চক্রবর্তী : দেশীয় চিনির দামের সাথে আমদানি করা চিনির দামের সামঞ্জস্য রাখতে আমদানিকৃত চিনির উপর শুল্কারোপের কথা ভাবছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে একটি আবেদনও করেছে মন্ত্রণালয়। দেশীয় চিনির দাম আমদানি করা চিনির দামের চাইতে তুলনামূলক বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষ দেশীয় চিনির ব্যবহার থেকে বিরত থাকে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা যায়, দেশীয় চিনির ব্যবহার বাড়িয়ে এই শিল্পকে বাঁচাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে যদি এমনটি হয় তাহলে আসন্ন রমজানে চিনির দাম বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
এ ব্যাপারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, আমাদের দেশে চিনি উৎপাদনের খরচ অনেক বেশি এ কারণে দামও বেশি। ফলে অপেক্ষাকৃত স্বল্পমূল্যের আমদানি করা চিনির চাহিদা বেশি। আমদানি করা চিনির দামে দেশিয় চিনি বিক্রি হলে চিনিকলগুলোর উৎপাদন খরচই উঠে না। ফলে অ-বিক্রিত থেকে লোকসান দিচ্ছে দেশীয় চিনিশিল্প। তাই আমরা ভাবছি আমদানী করা চিনিতে শুল্কারোপ করে দেশীয় চিনির দামের সাথে সামঞ্জস্য করার। এই লক্ষ্যে আমরা এনবিআরের কাছে ইতোমধ্যে আবেদন করেছি। এখন এনবিআর সিদ্ধান্ত দিলেই আমদানীকৃত চিনির উপর শুল্কারোপ করা হবে।
তবে আমদানিকৃত চিনির উপর শুল্কারোপের বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিআইয়ের পরিচালক খন্দকার রুহুল আমিন। তিনি বলেন, দেশীয় চিনির ব্যবহার বাড়াতে আমদানী করা চিনির উপর শুল্কারোপ করা কোনো সমাধান নয়। এক্ষেত্রে দেশীয় চিনির স্বাস্থ্যসম্মত বিষয়গুলো নিয়ে জনসাধারণের কাছে প্রচার-প্রচারণাসহ দেশীয় চিনি শিল্প খাতে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে। দরকার হলে এফবিসিসিআই থেকে আমরা সহযোগীতা করবো।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুল্কারোপ হলে দেশীয় চিনির মতোই আমদানী করার চিনির জন্যও ভোক্তাকে সমপরিমাণ মূল্য দিতে হবে। এমনিতে রোজার আগে কিছু মুনাফালোভী ব্যবসায়ী চিনির দাম বাড়িয়ে দেয়। আমদানী করার চিনির উপর শুল্কারোপ করা হলে সাদা চিনির দামও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
মগবাজারের চেয়ারম্যান গলির মুদি ব্যবসায়ী সোহানুর রহমান বলেন, যদি কেন্দ্রীয়ভাবে চিনির দাম বাড়ে তাহলে বাধ্য হয়ে আমাদেরকেও খুচরা বিক্রিতে দাম বাড়াতে হবে। আমাদেরও কিনতে হবে বেশি দাম দিয়ে।
তবে চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত চিনির মজুদ রয়েছে বলে জানা গেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে। মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বছরে মোট চিনির চাহিদা ১৬ লাখ টন। এর মধ্যে প্রায় দুই লাখ টন চিনি উৎপাদন করে সরকারি মিলগুলো। বাকিটা আমদানি করে চাহিদা মিটিয়ে থাকে বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
তবে বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আবুল হাশেম সাংবাদিকদের বলেন, রমজানের আগেই আমদানি করা চিনি বাজারে আসলে সংকট হবে না।