পাল্লা দিয়ে চলা : সড়ক যেন নরক না হয়
মোমিন মেহেদী
আমাদের রাস্তা ক্রমশ সমস্যার জালে আবদ্ধ হচ্ছে। আমরা প্রতিদিন গড়ে ৩৬ জন স্বজন-প্রিয়জন-মা-বাবা-ভাই-বোন হারাচ্ছি। ছাত্র-শিক্ষক সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে গণমাধ্যমে। কারণ একটাই পরিবহনে নির্মম নৈরাজ্যযুক্ত বর্তমান। এই নৈরাজ্যযুক্ত সময়ে যাত্রী ধরার প্রতিযোগিতায় বেপরোয়া সব বাস। সড়কে গাড়ির অবস্থানই বলে দিচ্ছে চালকরা কতটা বেপরোয়া। আর তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের রাজিব হাত হারিয়ে মৃত্যু শয্যায়। প্রতিদিন হাজারো দূর্ঘটনা ঘটে চলছে। এমনই একটা দুর্ঘটনার কথা বলি- নিউমার্কেট-সংলগ্ন চন্দ্রিমা মার্কেটের সামনের রাসস্তা দিয়ে রিকশায় করে মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছিলেন আয়েশা খাতুন। ঠিক সেসময় আজিমপুরের দিক থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরির দিকে যাচ্ছিল দুইটি বাস। তাদের মধ্যে কে কার আগে যাবে সেই প্রতিযোগিতার মাঝখানে পড়ে রিকশা থেকে ছিটকে পড়েন আয়েশা খাতুন এবং গুরুতর আহত হন। চম্পট দেয় দুই বাসের চালকই। চরম সত্যি হলো- ‘দুই বাসের মাঝে চাপ খায় রিকশাটা। আমরা সাথে সাথে আয়েশা খাতুনকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। বাস দুইটা পালিয়ে যায়। পরে একটি বাস ড্রাইভারসহ আটক করা হয়। অন্যটির চালককে ধরা যায়নি। তথ্য-প্রমাণ আছে তারা পাল্লা-পাল্লি দিয়ে যাচ্ছিল।’ আর এই দুর্ঘটনায় শিশুটি অক্ষত থাকলেও তার মায়ের মেরুদন্ড মারাত্মকভাবে জখম হয় এবং অপারেশন করতে হয়েছে। দুটি বাসই ছিল বিকাশ পরিবহনের। এই ঘটনাটি ঘটল এমন সময় যখন ঢাকার কারওয়ান বাজার এলাকার রাস্তায় দুই বাসের প্রতিযোগিতায় এক তরুণের হাত কাটার পর ঘটনার এক সপ্তাহও পেরোয়নি। ওই ঘটনায় বাসের যাত্রী তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হোসেন তার একটি হাত হারিয়েছেন দুই বাসের প্রতিযোগিতার মাঝে পড়ে। কাছাকাছি সময়ের মধ্যে ঢাকার বাইরের এ ধরনের আরেকটি ঘটনা হতবাক করেছে অনেক মানুষকে। ময়মনসিংহ জেলার একটি স্থানে অটোরিকশা থেকে ছিটকে পড়ার পর মধ্যবয়স্ক এক নারীকে পিষ্ট করে দেয় বাসের চাকা। সেভাবেই গাড়ি চালিয়ে অনেকদূর চলে যায় বাসটির চালক। চাকার তলায় পিষ্ট মায়ের মৃতদেহ বের করার অসহায় চেষ্টারত তার সন্তানের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। জানতে পারি রাস্তা-ঘাটে সাধারণ মানুষের জীবন কিভাবে অহরহ কেড়ে নিচ্ছে অদক্ষ আর পাষন্ড শ্রেণীর চালকেরা। একশ্রেণীর চালক থাকেন নিবেদিত দেশ ও মানুষের জন্য; তাদের বিপরিতে রয়েছে অদক্ষ এই ঘাতকশ্রেণীর চালকও। এই চালকদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি হওয়ায় আজ যখন তখন নির্মম পথ দূর্ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছি আমরা। কিন্তু তা আর হতে দেয়া যাবে না। লাগম টেনে ধরতে হবে বাংলাদেশে সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্বরত ওবায়দুল কাদের আর তার পরিবহন সেক্টরে কর্মরত লক্ষ লক্ষ সরকারী- বেসরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারি ও চালকদেরকে। যাতে করে সবার আন্তরিকতায় আমরা পাই একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ; সড়ক-আকাশ- নৌ ও রেলপথ দুর্ঘটনামুক্ত মানচিত্র। এই মানচিত্রের প্রত্যয়ে আজ জনগনও সচেতন- সোচ্চার হচ্ছে। ঘুরে দাঁড়াতে তৈরি বাংলাদেশের ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি। পরিপপাটি দেশ-মানুষের ইচ্ছে শক্তি আর ভালোবাসার পথচলা। যেহেতু বাংলাদেশে বাস চালকদের বেপরোয়া গতির কারণে প্রাণহানি কিংবা আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিন্তু চালকদের এই বেপরোয়া মনোভাব কেন? এমন প্রশ্ন নিয়ে অগ্রসর হতেই জানতে পারি, মহাসড়কে ড্রাইভারদের জন্য ঘণ্টাপ্রতি গতি-সীমা বেঁধে দিয়েছেন। কিন্তু ঢাকার রাস্তার ক্ষেত্রে চলেছে নৈরাজ্য। ‘লোকাল বাসগুলো প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালায়। সেজন্য অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। চালকদের চাকরির নিশ্চয়তা নেই।
লেখক : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ