সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই কী ফের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিস্ফোরণ?
একের পর এক অস্থির ও অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটেই চলেছে। গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে নানারকম খবর। কয়েকদিন ধরে অবস্থাটা অসহনীয় করে তোলার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। থেমে থেমে চেষ্টা। উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার। যেনো সরকারকে ঘায়েল করার পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে ঘায়েল করতে কী কী ‘দাওয়াই’ উপযোগী। এদেশে সব সময়ই আলোচিত ও লোভনীয় বিষয় হচ্ছে ‘এন্টি এস্টাব্লিসমেন্ট’ আন্দোলন। সুতরাং এই সুযোগটি কাজে লাগানো চাই। পরিস্থিতি উত্তপ্ত করবার চেষ্টা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পর এই আন্দোলন ( কোটা সংস্কার) শেষ হয়ে যেতে পারত কিন্তু তারা শেষ হতে দিচ্ছেন না কারণ তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। তারা বলছেন, ভিসির বাড়িতে হামলা করেছে সন্ত্রাসীরা, তাহলে তারা মামলা প্রত্যাহার চাচ্ছে কেন? পুলিশ তো তাদের নামে মামলা করেনি, পুলিশ চোখ না বাধার পরও তারা বলছে চোখ বাধা হয়েছিল। এতেই বোঝা যায় তারা কী চায়! তারা কারা? কী এই শ্রেণিটার উদ্দেশ্য। অবাক হয়ে দেখলাম, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টকশো-তে উত্তরদাতাদের চেয়েও আমাদের একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী পাশ কাটিয়ে জ¦ালাময়ী বক্তব্য দিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধন করেছেন; উত্তপ্ত কড়াইয়ে তেল ঢালবার মতো। সুতরাং সমস্যার সমাধাণ চান এমন মনে করবার কোনো কারণ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষকেরা মেয়েদের মোবাইল ফোন তল্লাশি করেছেন। কয়েকজনের ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক আন্দোলন হয়েছে যে কারণে, তা হচ্ছেÑ ‘তাদের তল্লাশি করা যাবে না’ এই ইস্যু নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযুক্ত ছাত্রীরা যেসব বিপজ্জনক কাজ করেছে এর ব্যাখ্যা পাচ্ছি না। তবে সকাল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে তাৎক্ষণিক তাদের হল থেকে বের করে দেওয়াও ঠিক হয়নি। এটা সত্য। কিন্তু পরিবেশে-পরিস্থিতির বিষয়টি বিচারে আনা হয়নি কেন? পত্রিকায় দেখলাম, এক বুুদ্ধিজীবী বলেছেন, ‘সূর্যাস্তের পর আইন অনুযায়ী কোনো নারীকে পুলিশ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারে না।’ যুক্তি বটে! একজন নারী হলেই তার জন্য সাত খুন মাপ এটি কোথায় বলা আছে। স্বামীকে ম্যানেজে করতে না পেরে কোলের শিশু নিয়ে জঙ্গি সংগঠনে অর্ন্তভুক্ত হওয়া শত শত নারী এদেশেও আছে তাই; বুদ্ধিজীবী নারীর ওই যুক্তি বোধগম্য নয়। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়কে অমর্যাদাকর এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেওয়া অবশ্যই গুরুতর অপরাধের শামিল। এর পেছনে কে বা কারা তা বের করবার সুযোগ তো সরকারকে দিতে হবে। ভিসি কী চাকরি দেন? এ ক্ষমতা কী তার আছে? ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসিকে হত্যার উদ্দেশে তার বাসভবনে যে কায়দায় তা-ব চলেছিল তা কী কোনো আন্দোলন? এটা তো সুস্পষ্ট সন্ত্রাস। এই সন্ত্রাসের বিচার করা যাবে না কেন? কেন তা-বের বিচার করা যাবে না? তবে কী পুলিশকে, গোয়েন্দা ও র্যাবকে কাজ করতে দেওয়া হবে না। ৪টি মামলা হয়েছে ভিসির বাংলো হামলার জন্য, সেই মামলা কেন ছাত্ররা প্রত্যাহার করতে বলছেন? এটাকে কারা সায় দিচ্ছেন, কেন? যদি প্রশ্ন করি, তাহলে অপরাধী কীভাবে ধরা পড়বে?
এদেশে যারা বরাবরই অল্প কথার মানুষ, ভদ্র ও শালীন তাদের ভাগ্যে দুর্গতি আছে। উঁচু স্বরে কথা বলা যাদের ধাতে নেই তারা সর্বত্রই বাতিল মাল। রাজনীতির মানুষ তো ননই তারা। রক্ত গরম ভাষণ যাদের কণ্ঠে থেকে বের হয় না তারা আর যাই হোক রাজনীতিতে বাতিল পন্য। এটাই কী প্রমাণ হতে চলেছে! যাতে তা না হয়, এই কারণে এ ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর সিদ্ধান্ত আসা উচিত। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতির মধ্যে রাখলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হবেÑ এটা সত্য। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীর দোহাই দিয়ে যারা ‘ফায়দা’ লুটতে চাইছে তাদের চিহ্নিত করার কাজটি কেন করতে দেওয়া হবে না? আমি তো মনে করি, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই যেকোনো সময় ফের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। ভুয়া স্ট্যাটাস কেন, কী উদ্দেশে?
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ঔপন্যাসিক/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ