আস্থার সংকটে অমিত সম্ভাবনাময় জীবন বীমা খাত, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি
ওয়াহিদুজ্জামান : সাধারণ মানুষের প্রচন্ড আস্থার সংকটে কোনমতে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলছে বাংলাদেশের অমিত সম্ভবানাময় জীবন বীমা খাত। ব্যবসায়ী প্রতিপ্রতিষ্ঠানগুলোর অব্যবস্থাপনা, মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের অদক্ষতা, অনিয়ম, জাল জালিয়াতি, বিশ্বাস ভঙ্গ, রাষ্ট্রীয় তদারকির অভাব এক অরাজক পরিস্থিতি চারদিক। অথচ এ সব সমস্যা দূর করে দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে জীবন বীমার ধারণা ছড়িয়ে দিতে পারলে একদিকে যেমন চলমান জীবনের অনিশ্চয়তা কাটিয়ে সাধারণ মানুষ জাতীয় উন্নয়নে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে পারবে, অন্যদিকে গার্মেন্টস ও শ্রমশক্তি রপ্তানি খাতের মতো বিপুল অর্জিত প্রিমিয়াম দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নিয়ামক শক্তি হিসেবে পরিগণিত হতো। দেশের অমিত সম্ভাবনাময় এ জীবন বীমা খাতকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম দুর্নীতি দূর করে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন আবশ্যক এবং এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সরাসরি পৃষ্টপোষকতারও অনুরোধ করেছেন জীবন বীমা শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজনেরা।
জীবন বীমা ব্যবসা বাংলাদেশের শত বছরের পুরোনো হলো এ খাতে দক্ষ জনশক্তি আজও গড়ে ওঠেনি। তা ছাড়াও ধর্মান্ধতা, শিক্ষার পশ্চাৎপদতা ও বীমা কর্মীদের অসততায় জীবন বীমার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ কখনই তেমন পরিলক্ষিত হয়নি। স্বাধীনতার পর বীমা শিল্প বিকাশে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গুরুত্ব দিয়ে ১৯৭২ সালে বীমা খাতকে জাতীয়করণ করা হয়। সেই আলোকে
দেশে বেশ কয়েকটি বীমা কোম্পানী গড়ে ওঠে। গত ৪৫ বছরে এসব কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ভাল ব্যবসা করলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান শীর্ষ থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত নানা দুর্নীতি ও জাল জালিয়াতিতে জড়িয়ে পরে। ফলে তার প্রভাবে সাধারণ মানুষের মাঝে চরম আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয় এবং জীবনবীমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকে। এমন এক দুঃখজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দেশের স্বনামধন্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রাণান্তর প্রচেষ্টা চালালেও তা তেমন কোনো আসছে বলে মনে হচ্ছে না। বরং অতি সম্ভাবনাময় এ খাতটি দিন দিন আরো বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের জীবন বীমা শিল্পের চরম দুরাবস্থায়, তা থেকে উত্তরণে আমরা আমাদের অর্থনীতির পক্ষথেকে কথা বলেছিলাম, বাংলাদেশ বেসরকারি পর্যায়ে জীবন বীমা উন্নয়ন ও প্রসারে গবেষণা মূলক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট এর মহাপরিচালক গুরুত্বপূর্ণ বীমা ব্যক্তিত্ব কাজী মো. মুর্তোজা আলীর সাথে। তিনি বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশ জীবন বীমার চারণভূমি। যে দেশের মানুষ ‘জীবন-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য’ করে অর্থ উপার্জনের জন্য পাগলের মতো দেশ দেশান্তের ছুটছে সে দেশের মানুষ জীবন বীমা গ্রহণ করে নিশ্চিত অর্থনৈতিক জীবন গড়ে তুলবে নাÑ একথা অবিশ্বাস্য। আমরা জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি চরিত্র পাল্টাই, আস্থাশীল হই তবে দেশের মানুষ দলে দলে জীবন বীমা গ্রহণ করবে নিশ্চিত। এ ছাড়াও এ বিষয়ে জীবন বীমা খাতের আরেক ব্যক্তিত্ব প্রাইম ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, আমি তো মনে করিÑ জীবন বীমা খাতের উন্নতি হলে দেশের উন্নতি হবে, দেশের মানুষের উন্নতি হবে, এখাতের অর্জিত বিপুল প্রিমিয়াম দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চালিকা শক্তিতে রূপান্তরিত হবে। তাই এ খাতের উন্নয়নের জন্য শুধু বীমা কোম্পানীগুলো নয়, রাষ্ট্রেরও দায়বন্ধতা রয়েছে। সরকারে উচিত, দেশের অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর মতো জীবন বীমা খাতকেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রহণ করে তার উন্নয়নে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়া।