প্রভাবশালীদের কারণে রাজধানীর পরিবহন খাতে নৈরাজ্য: মানবাধিকার কমিশন প্রধান
মো. ইউসুফ আলী বাচ্চু : রাজধানীর পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্যের মুল হোতা প্রভাবশালী মহল। তাদের কারণেই পরিবহন সেক্টর বেপরোয়া। গতকা শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সড়কে নৈরাজ্য অব্যবস্থাপনা উত্তোরনের উপায় শীর্ষক’ গোল টেবিল আলোচনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক একথা বলেন।
তিনি বলেন, ঢাকার মানুষের চলাচলের প্রধান বাহন বাস-মিনিবাস লেগুনা। সেইা বাস, লেগুনা চালক ও চলাচলের ব্যবস্থাপনা কোনোটিই ঠিকঠাক নেই। সড়কে বাস নামানোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে কোনো রকম সমীক্ষা ছাড়াই এবং অপরিকল্পিতভাবে। চালকেরা দক্ষ কিনা, মাদকাসক্ত কিনা তে দেখা হয় না। একারণে তারা কিছুটা বেপরোয়া। আর বাস-মিনিবাসের বেশির ভাগই ফিটনেসবিহীন। এতে নগরে গণপরিবহন ব্যবস্থায় চলছে চরম অসুস্থ প্রতিযোগিতা। কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁও মোড়ে এমন অসুস্থ প্রতিযোগিতার শিকার হয়ে প্রাণ গেছে কলেজছাত্র রাজীব হোসেনের। এর আগে ২০১৫ সালের জুন মাসে কারওয়ান বাজার দুই বাসের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় একটি বাস উল্টে গিয়ে প্রাণ হারান এক যুবক। ২০১৪ সালে মারা যান সাংবাদিক জগলুল আহ্মেদ চৌধূরী। তাঁকে কারওয়ান বাজারে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় এসেছে, যানজটের কারণে ঢাকায় এখন যানবাহনের গড় গতি ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার। গত বছর বিশ্বব্যাংকের হিসাবে তা ছিল ঘণ্টায় সাত কিলোমিটার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কম গতির শহরে এত প্রাণহানির পেছনে দায়ী চালকের বেপরোয়া মনোভাব, সড়কে অসুস্থ প্রতিযোগীতা এবং পরিবহন চলাচলের অনুমোদন পদ্ধতির বড় রকমের গলদ।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ২৪৬টি রুটে ৭ হাজার ৯৩৭টি বাস-মিনিবাস চলাচল করে। এসব বাসের মালিক আছেন প্রায় তিন হাজারের মত। এসব বাস-মিনিবাসের চলাচলের রুটপারমিট দেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত মহানগর আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি। গাড়ির মালিকের আবেদনের করার পর ট্রাফিক পুলিশ ও মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধির মতামত এবং আবেদনকারীর প্রভাব এই বিষয়গুলি সবচেয়ে বেশি বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যান সমিতির তথ্যমতে এ বছরের জানুয়ারী থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ১৭৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮৪১ জনের প্রাণহানি ও ৫৪৭৭ জন আহত আর ২৮৮ জন হয়েছে পঙ্গু।