রানা প্লাজা ধসের পাঁচ বছরেও কর্মপরিবেশে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি শ্রমিকদের
জাফর আহমদ: ভয়াবহ রানা প্লাজা ধ্বসে সহ¯্রাধিক শ্রমিকের প্রাণহানির পর শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তবে গত পাঁচ বছরে শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে নেয়া নানা উদ্যোগে শ্রমিক সংগঠনের প্রত্যাশা পূরণ হয় নি। বরং শ্রমিকদের অধিকার শিকলবন্দি হয়ে পড়েছে। রানা প্লাজা ধসের পর সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে ভবন, অগ্নি নির্বাপন, সরকারের পর্যবেক্ষণ দূর্বলতা ও শ্রম আইন কার্যকর না থাকার কারণে শ্রমিকের বঞ্চনার বিষয়টি। রানা প্লাজা ধসের পর এসব ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকে। পশ্চিমা বাজারে শ্লোগান উঠে শ্রমিকের রক্তমাথা পোশাক তারা ক্রয় করবে না। এর ফলে বিদেশি ক্রেতাগুলো যেমন ব্যবসা বন্ধের সম্মুখিন হয়, চাপও পড়ে দেশের তৈরি পোশাক খাতের উপর। ফলে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান, দেশের উদ্যোক্তা এবং সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় শ্রমিকের নিরাপত্তা প্রসঙ্গটি। সম্প্রতি অনুসন্ধানে দেখা গেছে অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। শ্রমিক নেতারা বলছেন, ট্রেড ইউনিয়ন কার্যকর না হওয়া ও শ্রম আইনে কালা-কানুনের মত বেশ কিছু বিষয়যুক্ত করার মধ্যে দিয়ে শ্রমিকদের আরও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, তৈরি পোশাক কারখানার নিরাপত্তায় বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশের পোশাক শিল্প এখন পরিবেশবান্ধব শিল্পে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ১০ কারখানার প্রথম দুটিসহ ৭টি গ্রীন কারখানা এখন বাংলাদেশে। রানা প্লাজা ধসে বিশ্বজুড়ে যে ইমেজ সংকটে পড়েছিল সে সংকট এখন আর নেই।
তথ্য অনুযায়ী রানা প্লাজা ধসের পর সব চেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল ভবন নির্মাণ ত্রুটি। ত্রুটিপূর্ণ কারখানা কিভাবে কারখানার জন্য অনুমোদন পায় সে বিষয়গুলোও সামনে আসে। ইউরোপের ক্রেতাদের প্রতিষ্ঠান এ্যাকোর্ড ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের প্রতিষ্ঠান এ্যালায়েন্স নিজ নিজ ক্রেতাদের অধীনে থাকা কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধানে কাজ শুরু করে। পাঁচ বছরে এ্যাকোর্ডের অধীনে থাকা ২০৯৬ টি কারখানার মধ্যে ৭৯ শতাংশ ত্রুটিমুক্ত করা হয়েছে। এবং এ্যালায়েন্সের অধিনে থাকা ৭০০টি কারখানার মধ্যে ৭৯ শতাংশ কারখানা ত্রুটিমুক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেছেন, বিদেশি ক্রেতারা মুখে বললেও শ্রমিকদের পেশাগত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভবনের ত্রুটি দূর করতে পারেনি। যদি তারা এটাই করতো তাহলে গাজীপুরের কারখানায় আগুন লেগে আরও শ্রমিক নিহত হতো না। ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ততটুকু করেছে যত টুকু করলে তাদের স্বার্থ পায়। তারা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজের চেয়ে প্রচার করেছে বেশি। শ্রমিকদের নিরাপত্তা তাদের কাছে মূল বিষয় নয়।
এ ব্যাপারে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কার্যকরি সভাপতি কাজী রুহুল আমিন বলেন, পাঁচ বছরে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলা হলেও পোশাক শিল্পকে শ্রমিকের জেল খানায় পরিনত হয়েছে। রানা প্লাজা ধসের পর আইন ও বিধিমালা সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বরং উল্টের হয়েছে। আগে ট্রেড ইউনিয়ন করলে বাকা চোখে দেখা হতো এখন চাকরি চলে যায়। মাস্তান দিয়ে এলাকা ছাড়া করে। ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের নজরবন্দি করে রাখা হয় বলে জানিয়েছেন স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগাঠনিক সম্পাদক আল কামরান।