কমনওয়েলথ উচ্চপর্যায়ের গ্রুপে আরো প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর
ফাতেমা আহমেদ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমনওয়েলথ সচিবালয় পরিচালনা র্যালোচনায় উচ্চ পর্যায়ের গ্রুপে এশিয়ার দেশসমূহ থেকে প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের সদস্য রাষ্ট্র অন্তর্ভুক্ত করে এই গ্রুপটিকে আরো প্রতিনিধিত্বশীল করার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার লন্ডনের উইন্ডসর ক্যাসেলে সিএইচওজিএম রিট্রিটে কমনওয়েলথ নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন পারস্পরিক আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন। বাসস।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহ্সানুল করিম জানান, দিনব্যাপী রিট্রিটে উচ্চ পর্যায়ের গ্রুপের সম্প্রসারণ, অর্থায়ন ও কমনওয়েলথ সচিবালয় গভর্নেন্স এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে রিট্রিট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। কমনওয়েলথ রাষ্ট্রসমূহের সরকার প্রধানগণ এতে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বোর্ড অব গভর্নরের সাথে উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার জন্য একটি প্রক্রিয়া থাকা উচিত।
তিনি বলেন, উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থায়নে বহুপক্ষীয় ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে বিনিয়োগ ঋণের জন্য রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির আওতায় আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা যেতে পারে।
তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭২ সালের একটি বক্তব্যের উল্লেখ করে বলেন, ‘আসুন, জাতীয় সম্পদের অপচয় না করে তা জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ব্যবহার করি।’
শেখ হাসিনা কানেক্টিভিটি সম্পর্কিত খসড়া ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমরা কানেক্টিভিটি ইস্যুটি দেখতে কমনওয়েলথে স্থান পেয়েছে দেখে আনন্দিত হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কানেক্টিভিটি একটি অধিকতর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের চাবিকাঠি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ-ভূটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) উপ-আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা কানেক্টিভিটি এজেন্ডা প্রশ্নে একটি দ্রুত কর্মপরিকল্পনার ওপর গুরত্বারোপ করছি এবং এই পরিকল্পনার আওতায় মাল্টি সেক্টরাল অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য কমনওয়েলথ অংশীদারিত্বের আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ সাইবার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই ঘোষণায় রূপরেখা হিসেবে সাইবার পরিচালনায় সহযোগিতার ক্ষেত্রে এই নীতি-আদর্শ ও দিক-নির্দেশনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তিনি এই ঘোষণার আশু বাস্তবায়নের জন্য সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যথাযথ কর্ম পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য কমনওয়েলথ সচিবালয়ের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথের সংস্কারের গুরুত্বের বিষয়ে বলেন, কমনওয়েলথের অনেক পুরানো বর্তমান গঠন কাঠামো ও বিন্যাস অপর্যাপ্ত এবং আমাদের প্রত্যাশা আংশিক পূরণ করতে পারে।
কমনওয়েলথের যে কোন পর্যালোচনা ও সংস্কার অবশ্যই সংস্থাটির ভবিষ্যৎ উন্নয়নের দিকে লক্ষ্য রেখে করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কমনওয়েলথকে অবশ্যই ক্রমবর্ধমানভাবে এর নিজের মধ্যে সংশ্লিষ্ট হতে হবে এবং অবশ্যই এর কর্মসূচিতে বেসরকারি খাত ও বিভিন্ন পেশাজীবী গ্রুপকে স্বাগত জানাতে বৃহত্তর ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি সংস্থাটিকে আরো কার্যকর করতে তিন দফা সুপারিশ পেশ করে বলেন, ‘এজন্য আমাদের সংস্থার (কমনওয়েলথ) পরিবর্তন এবং সম্ভবত নতুন করে যাত্রা শুরু করা প্রয়োজন।’
প্রথমে তিনি একটি কমনওয়েলথ উন্নয়ন তহবিল এবং সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য একটি প্লাটফর্ম গঠনের প্রস্তাব করেন।
দ্বিতীয়তঃ তিনি তৃণমূল পর্যায়ে কমনওয়েলথ মূল্যবোধ গ্রহণের মাধ্যমে কমনওয়েলথের রাজনৈতিক মূল্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারী এসোসিয়েশনের ভূমিকা বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
তৃতীয়তঃ তিনি প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাবের জন্য একটি বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব করেন।