টিআইবির অভিযোগ সঠিক নয় : শ্রম প্রতিমন্ত্রী আমার সঙ্গে আলোচনায় বসুক তাদের ভুল ভাঙ্গবে
আনিসুর রহমান তপন: ‘তৈরি পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার দেওয়া হচ্ছে না’, টিআইবির এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তাদেরকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু।
গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মাধ্যমে টিআইবি’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী। এসময় তিনি বলেন, এতে তাদের অনেক অভিযোগ যে ঠিক নয়, তার সুস্পষ্ট ধারণা পাবে টিআইবি।
কারণ হিসেবে চুন্নু বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন ছিল মাত্র ১২০টি। এর পর মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে আজ ২০১৮ সালের এ পর্যন্ত শুধু এই খাতেই দেশে ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭’শ তে। আমরা কি বসে আছি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ওনারা হিসাবটা নেন না কেন? এখন বাংলাদেশে অবস্থিত কারখানাগুলেতে সাড়ে আট হাজার রেজিস্টার্ড ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। এরপরও নিয়ম অনুযায়ী কেউ যদি ট্রেড ই্উনিয়ন নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে তাহলে যাচাই-বাছাই করে তাদেরকে আমরা অনুমতি দিচ্ছি। যদি কোনো কারণে কাউকে অনুমতি না দেই সেই কারণটিও বিস্তারিত জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাই আমি মনে করি টিআইবি এই জিনিসগুলি ভালমত জানেন না। তাই আপনাদের মাধ্যমে তাদেরকে আমার সঙ্গে আলোচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। তাহলে অনেকগুলি সমস্যার সমাধান তাদের দিতে পারব। এর বাইরেও যদি তারা আমাদের কোথায় সমস্যা আছে দেখিয়ে দেয় তবে সেগুলোরও সমাধানের চেষ্টা করব।
শ্রমিকের সেফটি বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের সব কর্মস্থল শতভাগ নিরাপদ সেটি মনে করি না। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ৮৩ লাখ অর্থনৈতিক ইউনিট রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই সব ইউনিট শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কিনা তা সরকারের ৫০০ পরিদর্শক দিয়ে যাচাই করা সম্ভব না। তাছাড়া কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে আমরা, নিহত ও আহত শ্রমিক দের পাশে আগেও দাড়িয়েছি, ভবিষ্যতেও কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় কোনো শ্রমিক মারা গেলে নিহত শ্রমিক পরিবারের পাশে দাঁড়াবে সরকার। তিনি বলেন, আমরা এ ক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ২ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকি। এ পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে নিহতদের জন্য মন্ত্রণালয় ২২ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ‘শ্রমিক কল্যাণ’ তহবিলের অর্থ থেকে এ টাকা দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তহবিলে আরও প্রায় পৌনে ৩শ’ কোটি টাকা রয়েছে। এ অর্থ প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমিকের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। চুন্নু বলেন, রানা প্লাজা ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্থ একটি পরিবারও যদি ক্ষতিপূরণ না পেয়ে থাকে তাহলে তারা যেন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন। আমরা তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামীকাল শনিবার তৃতীয়বারের মতো দেশে পালিত হবে ‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস’। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সুস্থ শ্রমিক নিরাপদ জীবন, নিশ্চিত করে টেকসই উন্নয়ন’। দিবসটি উপলক্ষে আগামীকাল ২৮ এপ্রিল শনিবার বিকাল ৪টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা অনুষ্ঠান হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব আফরোজা খান, আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, কারখানা মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সচেতনতা বাড়াতে এবং মালিকদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে চলতি বছর ১০টি কারখানাকে ‘পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি উত্তমচর্চা পুরস্কার’ দেওয়া হবে। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত কারখানা মালিকদের হাতে এই সম্মাননা পদক তুলে দেবেন।