যে জাহাজটি ডুবে যাওয়ার কথা ছিল
ম্যাক্ডোনাল্ড মিঠুন বৈরাগী
সদাপ্রভু মহান ও অতীব কীর্ত্তনীয়। গীতসংহিতা ১৪৫:৩ পদ
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় বেঙ্গল পাইলট সার্ভিসের লোকেরা বিপদসংকুল জলরাশির মধ্যদিয়ে ১৬০ মাইল পথ জাহাজ পরিচালিত করল। কোন কোন স্থানে নদী মাত্র ২৮ গজ প্রশস্ত ছিল। ভীষণ ¯্রােতের দরুণ প্রতিদিন দিক পরিবর্তন করতে হয়েছে।
একটি পাইলট বোট ভারতের পূর্ব তীরবর্তী স্থান হতে দূরে সরে গেলে একটি বিমান তাদের উপর দিয়ে উড়ে গেল। এটা বেতার জানিয়ে দিল, ‘জাপানের ডুবো-জাহাজ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেই রয়েছে।’ অর্থাৎ জাহাজটিকে তীরের দিকে যেতে হবে। কিন্তু বায়ুমান যন্ত্রটি বলে দিচ্ছে, তীরের দিকে ঝড়, তাই জাহাজটিকে সমুদ্রের দিকেই চালিয়ে রাখতে হবে। ঝড়ের স¤œুখীন না হয়ে বরং ডুবোজাহাজটির দিকে অগ্রসর হওয়া যাক, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কাপ্তান আদেশ দিলেন ‘দ্রুত স¤œুখে এগিয়ে চল,’ তাই তারা গভীর জলের দিকে অগ্রসর হল। ভোর চারটার দিকে তারা কোলকাতা থেকে ১৮০ মাইল দূরে ছিল, তখন ঝড় আঘাত হানল। তারা নঙ্গরগুলো ফেলে জাহাজটিকে মজবুত ও কিছুটা নিরাপদ করে নিল। এটি যেন তেন একটি ঝড় নয়। কয়েক ঘণ্টা অতিবাহিত হল এবং লোকেরা তাদের জীবনের জন্য শংকিত হল। তারা না পারে দাঁড়িয়ে থাকতে, না পারে শুয়ে পড়তে। ঘুমোনোও সম্ভব ছিল না। সারা রাত তারা জাহাজের মধ্যে যেন উলোট পালোট খাচ্ছিল, সময়তে তারা মনে করেছে, এবুঝি জাহাজ উল্টে গেল। সকাল দশটায় সমুদ্র কিছুটা শান্ত হলে তারা দেখল জাহাজের কোথায় কি ক্ষতি হয়েছে। তারা দেখল দু’টি নঙ্গরই ভেঙ্গে গেছে। জাহজের অনেক যন্ত্রপাতি ঢেউ এ ধুয়ে নিয়ে গেছে এবং জাহাজের পাখার কোন খোঁজ নেই। বেতার পরিচালক তার বেতার পরিচালনার ব্যবস্থা করে ফেললেন এবং একটি শিকল চেয়ে পাঠালেন।
তাদের জাহাজটিকে অন্য একটি জাহাজ শিকল দিয়ে বেধেঁ কোলকাতায় আনা হচ্ছিল। লোকেরা দেখল নদী তীরে গরু, কুকুর, বিড়াল, মানুষের মৃত দেহ পড়ে আছে। নৌকাগুলো নদীতীরে ধান ক্ষেতের মধ্যে উঠে এসেছে।
জাহাজ মেরামত কারখানায় লক্ষ্য করা গেল জাহাজের দু’ডালি ভীষণ ভাবে চেপটা হয়ে গেছে। জাহাজের লোকেরা কি ভাবে রক্ষা পেয়েছে তা একটি অলৌকিক ব্যাপার।
কাপ্তান বললেন, ‘হে লোকবৃন্দ, আমরা জাহাজ ত্যাগ করার আগে ঈশ্বরের কাছে ধন্যবাদ জানাই।’ প্রত্যেকে জাহাজের প্রধান কর্মচারী, প্রধান নাবিক, এবং জাহাজ চালক অন্যে ধর্মের লোকেরা পর্যন্ত মস্তক অবনত করলেন। তারা উপলব্ধি করতে পারলেন সৃষ্টিকর্তাই তাদের রক্ষা করেছেন। ‘সদাপ্রভু মহান ও অতীব কীর্ত্তনীয়।’ সংগৃহীত