বিলুপ্তপ্রায় বাবুই পাখি
ফয়সল আহমেদ খান,বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাওরাঞ্চল বাঞ্ছারামপুর উপজেলাসহ পাশর্^বর্তী হোমনা, মুরাদনগর,নবীনগর অঞ্চল থেকে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি। মানুষের মুখে মুখে এখনও উচ্চারিত হয় কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী কবিতা- ‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই।’ সময়ের বিবর্তনে ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আজ হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পী, সম্প্রীতি এবং সামাজিক বন্ধনের কারিগর বাবুই পাখি ও এর বাসা। বর্ষা আগমনের পূর্বেই সাধারণত বাবুই পাখি বৃষ্টির পানি হতে ও প্রজননের জন্য নতুন বাসা বুনে। অথচ, এখন তা দেখা মেলা ভার। গ্রামবাংলায় এখন আর আগের মতো বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ে না। বাবুই আবহমান বাংলার শোভন পাখি। তালগাছের পাতায় দলবেঁধে বাসা বাঁধে এরা।এমন সুন্দর চমৎকার নিপুণ কারিগরী বাসা আর কোনো পাখি বুনতে পারে না। যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড় বৃষ্টি-বাতাসেও টিকে থাকে বাসা। খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ও কাঁশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচু তালগাছে চমৎকার আকৃতির বাসা তৈরি করে বাবুই পাখিরা। একান্নবর্তী পরিবারের মত এক গাছে দলবদ্ধ বাসা বুনে এদের বাস। বাবুই পাখি একাধারে শিল্পী, স্থপতি এবং সামাজিক বন্ধনেরও প্রতিচ্ছবি। দিনে দিনে উজার হচ্ছে তালগাছ। এরসঙ্গে উজার হচ্ছে বাবুই পাখির বাসা। কয়েক বছর পূর্বেও গ্রাম-গঞ্জের তাল, নারিকেল ও সুপারি গাছে ব্যাপকভাবে বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ত। কিন্তু এখন আগের মতো বাসা আর পড়ে না বাবুই পাখির বাসা। বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- এরা রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করার জন্য জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে। সকাল হলেই আবার তাদের ছেড়ে দেয়। সাধারণত তাল, খেজুর, নারিকেল, সুপারি ও আখক্ষেতে বাসা বাঁধে। ধান, চাল, গম ও পোকা-মাকড় প্রভৃতি এদের প্রধান খাবার। বাঞ্ছারামপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান পাখিপ্রেমিক দুধ মিয়া বিএসসি বলেন, বর্তমানে যেমন তাল জাতীয় গাছ হারিয়ে যাচ্ছে ঠিক তেমন হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি। আগের মতো তাল গাছও নেই, বাবুই পাখিও নেই।
সচেতন মহল মনে করেন, বাবুই পাখির আবাস তাল গাছ এবং বাবুই পাখি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারি উদ্যোগ জরুরি। সম্পাদনা : মুরাদ হাসান