রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে রাশিয়া চীন ভারত জাপানের সহায়তা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের সাক্ষাত
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে রাশিয়া, চীন, ভারত ও জাপানের মতো দেশগুলোকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবনে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্যে বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমারের কাজ করা উচিত। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি কেল্লি কিউররি বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির ভূষসী প্রশংসা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে কাজ করে একটি নতুন আন্তর্জাতিক মানদন্ড সৃষ্টির মাধ্যমে শেখ হাসিনা সবার জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
রাশিয়ার প্রতিনিধি দিমিত্রি পলিয়েন্সকি রোহিঙ্গা সমস্যায় বাংলাদেশকে মস্কোর সমর্থনের আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার সমর্থনের কথা স্মরণ করে বলেন, আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। চীনের প্রতিনিধি বলেন, বেইজিং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।
গণভবনে ইউএনএসসি’র প্রতিনিধি দলের সাক্ষাত শেষে প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বৈঠক সম্পর্কে জানান। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে রাশিয়া, চীন, ভারত ও জাপানের মতো সেগুলো জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করছি।
প্রেস সচিব আরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্যে ঢাকা ও নেপিডোর মধ্যকার স্বাক্ষরিত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির ওপর প্রবল চাপ অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, জাতিসংঘের তত্ত্ববধানেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা সংঘাত চাই না, এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সংকট সমাধানে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফর এবং মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, আমরা এই সংকট সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছি।
সন্ত্রাস দমনে সরকারের বিভিন্ন পদেক্ষপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সন্ত্রাসবাদকে পুরো নিয়ন্ত্রণ করেছি। এ ব্যাপারে আমরা খুবই সতর্ক। রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আবাসনের জন্য ভাষান চর নামের একটি দ্বীপের উন্নয়ন চলছে। এ দ্বীপে কমপক্ষে ১ লাখ মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা হবে। সরকার রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন ও তাদেরকে পরিচয়পত্র দেয়ার ব্যবস্থা করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।