মে দিবসের অঙ্গিকার হউক বৈষম্যহীন বেতন কাঠামো
প্রকৌশলী নওশাদুল হক
সারাদিন অফিস শেষে পরিশ্রান্ত শফি বাসায় ফেরার পথে বাসের পিছন সারির সিটে ঘুমাচ্ছিলো। আসাদ গেটে আসার আগে থেকেই আসাদ গেটের যাত্রীদের নামতে প্রস্তুত হতে চিৎকার করছিলো গুলিস্থান হতে মিরপুরগামী লোকাল বাসের হেলপার। কিন্তু অর্ধ ঘুমন্ত থাকায় চিৎকারের হাওয়া ভাসা ভাসা কানে আসায় সে ডাকে সারা দিতে ব্যর্থ হয় শফি। কয়েক সেকেন্ড পর শফির ব্রেইন পুরোপুরি কার্যকর হলেই চোখ খুলে দেখে বাসটি আসাদ গেট ক্রস করছে। দৌড়ে দরজার দিকে এগিয়ে নামানোর আকুতি জানালে হেলপার শফির আহ্বানে সাড়া দিয়ে নামানোর সময় ব্যঙ্গ করে শফিকে হেলপারের জিজ্ঞাসা- আপনি কি সরকারি চাকরি করেন? কিভাবে বুঝলে? নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছেনতো! সাধারণ জনগণের বিশ্বাস, সরকারী চাকরিজীবি মানেই অনেক টাকা, অনেক শান্তি, নো টেনশন, সাথে সুখের ঘুম। বর্তমানে সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়স ত্রিশ আর অবসরের বয়স উনষাট বছর। সেটাকেও টেনে আরও লম্বা করতে দুপক্ষই মরিয়া। এক সময়কার গড় আয়ু পঞ্চাশ কালক্রমে জীবন মানের উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও চিকিৎসা সেবার উন্নয়নে আজ সত্তরের কোটায়। সুতরাং সরকারি চাকুরিজীবি বিশেষ করে আমলাতন্ত্রের কারিগরেরা যাদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটেছে যথেষ্ট, স্বাস্থ্য সচেতনতার ব্যাপারে কোন ছাড় নেই, হাঁচি দিলেই সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড রওয়ানা হন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই যৌক্তিক। এমনও অনেক সরকারি কর্মচারী আছেন যারা কলুর বলদের মতো খেটেছেন সারা জীবন ধরে অফিস ও সংসার দু’জায়গাতেই। তাদের জীবন মানের উন্নয়ন হয়নি কোন কালেও। স্বাস্থ্য সচেতনতার দিকে নজর দেয়ার সময় পাবে কোত্থেকে? আর উন্নত চিকিৎসা হাতের নাগালের অনেক বাইরে দিগন্তে বসে তার পানে চেয়ে চোখ টিপ মারে। ভগ্ন ও রোগাক্রান্ত শরীরে পঞ্চাশের পর আর স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারে না। ফলশ্রুতিতে যথার্থ সার্ভিস দিতে অক্ষম। সেক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির সার্ভিস লেন্থ বৃদ্ধিতে প্রজাতন্ত্রের ফজিলত কি? একটা দেশের খেলার দল গঠনের আগে সিলেকটেড সকল খেলোয়ারকে পূর্ণ সময় ধরে দলে খেলার উপযোগী করে তবেই দল গঠন করতে হয়। এর মধ্যে একজনেরও যদি উপযুক্ততা না থাকে তবে টিম দুর্বল হয়ে পড়ে এবং টিম প্রতিযোগিতায় হারার সম্ভাবনাই বেশি থাকে।
লেখক : প্রকৌশলী, গণপূর্ত বিভাগ/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ