ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নাগরিকদের নিরাপত্তা হুমকিতে: টিআইবি
ফয়সাল মেহেদী : প্রস্তাবিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’ দেশের গণমাধ্যমকর্মীদের পাশাপাশি সকল নাগরিকের নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলবে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। মুক্ত পরিবেশে স্বাধীনভাবে বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকার চর্চা অব্যাহত রাখতে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৮ ধারা পুর্নবিবেচনা এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। একইসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে আইনটির বিষয়ে অগ্রসর হতেও সংসদীয় কমিটির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশ^ মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে ২ মে বৃহস্পতিবার এ আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সকল নাগরিকের বাক্-স্বাধীনতা তথা মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের সাংবিধানিক অঙ্গীকার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি। ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে প্রস্তাবিত আইনটি প্রণীত হলে শুধু মত প্রকাশের ক্ষেত্রেই নয়, গণমাধ্যমকর্মীদের পাশাপাশি সকল নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার চর্চার ক্ষেত্রে অধিকতর নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে।
যৌক্তিক বিধি নিষেধ সাপেক্ষে সংবিধান মত প্রকাশের যে স্বাধীনতা দিয়েছে, তা ৫৭ ধারার কাছে অসহায় উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীসহ মূল ধারার গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ইতিমধ্যেই একদিকে অভূতপূর্ব ভীতি ও অন্যদিকে ভীতি প্রসূত স্ব-আরোপিত সেন্সরশিপ চাপিয়ে দিয়েছে। যা বাক্-স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীন দায়িত্ব পালনের প্রধান অন্তরায় বলে বিবেচিত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সংশোধন ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৮ ধারাগুলো প্রণীত হলে সার্বিকভাবে দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা ও গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের সম্ভাবনা ধুলিস্যাৎ হবার ঝুঁকিতে পড়বে।
খসড়াটি সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ সত্ত্বেও ধারাগুলো সংশোধন না করেই সংসদে উত্থাপিত হওয়াকে হতাশাজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ আইনের ফলে বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতিসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের তথ্য প্রকাশ যেমন অসম্ভব হয়ে পড়বে, তেমনি এসব অপরাধের সুরক্ষার মাধ্যমে অধিকতর বিস্তৃতি ঘটাবে।
সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিশ্চিতের যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে প্রস্তাবিত আইনটি সেক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করবে উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টেকসই উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি জনগণ, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমসহ সকল নাগরিক যাতে ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন ও বাধাহীন মতামত প্রকাশ করতে পারে তার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। খসড়া আইনটির সংশোধনের দায়ভার সংসদীয় কমিটির ওপর থাকায় কমিটিকে অবশ্যই ইতিবাচক ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।