ছোট দলগুলো মন্ত্রণালয় পাবে, স্বতন্ত্রদের মধ্য থেকেও মন্ত্রী হচ্ছেন কেমন হবে নির্বাচনকালীন সরকার
আসাদুজ্জামান স¤্রাট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যে নির্বাচনকালীন সরকারের কথা চিন্তা করা হচ্ছে তাতে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকী স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদেরও এই মন্ত্রিসভায় স্থান হতে পারে। সংসদের বাইরে থাকার অযুহাতে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিকে উপেক্ষা করার জোর চেষ্টা রয়েছে সরকারের ভেতর। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এখনই তোড়জোর শুরু হলেও সংবিধানে এর কোনো অস্তিত্ব নেই।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে গঠন করা হয়েছিল নির্বাচনকালীন সরকার। ওই সরকারে সেসময়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা রাজনৈতিক দলগুলোর সবগুলোরই প্রতিনিধিত্ব ছিল। এবারও ব্যতিক্রম হবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও জানিয়ে দিয়েছেন, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের এমপিদের নিয়েই গঠন করা হবে নির্বাচনকালীন সরকার। এ হিসেবে নির্বাচনকালীন সরকারে দেখা যেতে পারে সরকারের বাইরে থাকা দলগুলোর নেতাদেরও। এছাড়া স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেও মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়া হতে পারে। দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনকালীন সরকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে বিএনপিকে আহ্বান জানানো হয়েছিল। এবার নির্বাচনকালীন সরকারে তাদের না রাখার চেষ্টা করবে সরকার। সেক্ষেত্রে সরকারের কাছে অযুহাত রয়েছে, সংসদে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব না থাকা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পরিষ্কারভাবে বলেছেন, আগামী নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানোর কোনো চিন্তা-ভাবনা সরকারের নেই। যদিও বিএনপি ইতিমধ্যেই নির্বাচনকালীন সরকারে থাকার আগ্রহ দেখিয়েছে।
সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিন অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একই বছরের ২৯ জানুয়ারি নির্বাচিত সদস্যরা সংসদের প্রথম অধিবেশনে বসেছিলেন। এদিন থেকেই সংসদের ৫ বছরের মেয়াদ শুরু হয়েছে। যা শেষ হবে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি।
সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে (ক) ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে।’ এ কারণে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন শেষ করতে হবে। ভোট গ্রহণের পর ঘোষিত ফলের গেজেট প্রকাশসহ কিছু কাজ থাকে। এ ছাড়া কিছু কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হলে সেগুলোর নির্বাচনও মেয়াদের মধ্যেই শেষ করতে হয়। এ জন্য নির্ধারিত ৯০ দিন শেষ হওয়ার আগেই ভোটের সময় নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শেষ দিকের যে কোনো দিন ভোটের সম্ভাবনাই বেশি।
এ হিসেবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে চাইলে অক্টোবরেই এ সরকার গঠন করতে হবে। সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকার বলে কিছু না থাকার কারণে এর আকার কী হবে তা নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। প্রধানমন্ত্রী চাইলে দশম সংসদের আগের মতো মন্ত্রিসভার আকার ছোট করতে পারেন আবার বড়ও করতে পারেন। তবে আকার যা-ই হোক এ সরকারে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সকল রাজনৈতিক দলকেই অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমানে মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টি, জাসদ, জাতীয় পার্টি (জেপি) ও ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। সংসদে প্রতিনিধিত্ব রয়েছে কিন্তু সরকারে নেই এমন রাজনৈতিক দল রয়েছে মাত্র দুটি। এর মধ্যে তরিকত ফেডারেশনের দুটি এবং বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (বিএনএফ) ১টি আসন রয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদে এসেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতির সেকেন্ড ইন কমান্ড উষাতন তালুকদার। আসন্ন নির্বাচনকালীন সরকারে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও সাবেক মহাসচিব এম এ আওয়ালের মধ্যে একজনকে মন্তিসভায় নেয়া হতে পারে। তবে যিনিই মন্ত্রিসভায় আসবেন তাকে মহাজোটের মনোনয়ন দেয়া হবে না-এমন শর্ত দেয়া হতে পারে। বিএনএফ-এর আবুল কালাম আজাদকে এবং উষাতন তালুকদারের মন্ত্রিসভায় যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমানে সরকারে থাকা জাতীয় পার্টির সবাই মন্ত্রিসভায় না-ও থাকতে পারেন। নতুন মুখ হিসেবে নির্বাচনকালীন সরকারে যুক্ত হতে পারেন দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার ও সাবেক মন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের। নির্বাচনকালীন সরকারে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে এইচ এম এরশাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়েই এ পরিবর্তন আনা হতে পারে। সেক্ষেত্রে বর্তমানে যে তিনজন রয়েছে তাদেরকে সরে আসতে হতে পারে। নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ থেকে সরে আসতে পারেন এইচ এম এরশাদও।
গুঞ্জন রয়েছে, এর বাইরে দলের কিছু ত্যাগী নেতাকে মন্ত্রিসভায় যুক্ত করে মূল্যায়ন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হলে আগের নির্বাচনের প্রার্থী আজমত উল্লাহকে মন্ত্রিসভায় আনার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পুরো বিষয়টি একটি রূপ পাবে আসন্ন বাজেট অধিবেশনের পর। বর্তমান সরকারের শেষ নির্বাচনি বাজেটের পর এসব বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হবে।
আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, সংবিধানে অন্তর্র্বতীকালীন বা নির্বাচনকালীন সরকারের কোনো বিধান নেই। নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকার স্বাভাবিকভাবে দায়িত্ব পালন করে যাবে। বর্তমান নির্বাচিত সরকার পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। নির্বাচনের সময় সরকারের আকার ছোট করতে হবে এমন কোনো বিধান নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে সেটা করতে পারেন। তিনি চাইলে ছোট না করে সরকারের আকার বড়ও করতে পারেন। এতে সংবিধানের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।