নির্মূলের মুখে রোহিঙ্গা, চুপ থাকতে পারে না ওআইসি: প্রধানমন্ত্রী
উম্মুল ওয়ারা সুইটি ও তরিকুল ইসলাম: রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের দুর্ভোগ অবসানে মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রাখতে মুসলিম দেশগুলোর সক্রিয় পদক্ষেপ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মুসলিম দেশগুলোর প্রতি শান্তি, সংহতি ও ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (স.) অত্যাচারিত, নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়ে গেছেন। রোহিঙ্গারা আজ নির্যাতিত, নিপীড়িত ও নির্মূলের মুখে। মিয়ানমারের অমানবিক নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষার জন্য শুধু মানবিক করণে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। এ অবস্থায় ওআইসি নিশ্চুপ থাকতে পারে না। আমাদের অবশ্যই এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো অপারেশন (ওআইসি) এর ৪৫তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্টি। তাই এ সমস্যা মিয়ানমারকেই সমাধান করতে হবে। আর ওআইসিকে অবশ্যই মিয়ানমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ অব্যাহত রাখতে হবে- মিয়ানমার যেন বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা অনুযায়ী তাদের নাগরিক রোহিঙ্গাদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আমাদের মতোই মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার ও জীবন ধারনের অধিকার রাখে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সময় এসেছে আমাদের যৌথ কর্মকৌশল গ্রহণের। এর মাধ্যমে মুসলিম বিশ্ব এগিয়ে যাবে। মুসলমানদের যে মেধা এবং সম্পদ রয়েছে তাতে পিছিয়ে পড়ার কোনো কারণ নেই। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সন্ত্রাস দমনে চার দফা পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলো হলো- অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করা, জঙ্গিদের অর্থ সরবরাহ বন্ধ করা, নিজেদের মধ্যে বিভেদ বন্ধ এবং নতুন করে সকলের জন্য সুবিধা হয় এমন সব বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে হবে। এই চার দফা মানলে মুসলিম বিশ্ব এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, ‘ইসলামিক ভ্যালুজ ফর সাসটেইনেবল পিস, সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট’।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মুসলিম বিশ্বে এত সংঘাত, সন্ত্রাস, রক্তপাত আর বাস্তহারা হওয়ার ঘটনা আগে কখনও দেখা যায়নি। কেন এসব ঘটছে তা খুঁজে কের করতে হবে।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ আজ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারছে। আমাদের মূল শক্তি হলো যুব সমাজ। এদেরকে সঙ্গে নিয়ে নারী-পুরুষ পাশাপাশি কাজ করে আমরা এগিয়ে যাব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিপীড়িত ও নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা চিত্ত ও সীমান্ত দুটোই খুলে দিয়েছি। বাংলাদেশে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। তারা যে কী ব্যথা অনুভব করছে তার জন্য আমিও ব্যাক্তিগতভাবে ব্যাথিত। কারণ আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর আমি এবং আমার বোন ৬ বছর উদ্বাস্তু হিসেবে বিদেশের মাটিতে কাটিয়েছি।