গাজীপুর সিটি নির্বাচন হাইকোর্টে স্থগিত
এস এম নূর মোহাম্মদ : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। তফসিল অনুযায়ী সেখানে আগামী ১৫ মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম আজহারুল ইসলাম সুরুজের করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল রোববার বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্তির গেজেট এবং সিটি নির্বাচনের প্রজ্ঞাপন ও তফসিল কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সিটি করপোরেশন-২), ঢাকা জেলা প্রশাসক, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নয়জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এই আবেদনকারী এর অগে একই বিষয়ে রিট করেছিলেন, সে রিটের প্রেক্ষিতে আদালত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে আদেশ দিয়েছিলেন বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য। সরকার সেটি নিষ্পত্তি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তিনি বলেন, সীমানা নির্ধারণের গেজেট প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সে অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারি ও তফসিল ঘোষণা করেছে। ফলে এর দায় নির্বাচন কমিশনের না। তবে আপিলের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিবে বলে জানান তিনি।
এদিকে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, আদেশের কপি পাওয়ার পর আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এছাড়া রিটকারী পক্ষের আইনজীবী বিএম ইলিয়াস কচি বলেন, সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি ঢাকা জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়নি। তাছাড়া অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে প্রশাসনিক নিয়মও মানা হয়নি। এছাড়া ছয়টি মৌজার স্থানীয়রা দ্বৈত নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং তাদেরকে দুই জায়গায় কর পরিশোধ করতে হবে। এসব বিষয় উল্লেখ করে ২০১৩ সালের গেজেট ও নির্বাচন কমিশনের দেওয়া প্রজ্ঞাপন ও তফসিল চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করা হয়।
জানা যায়, ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। পরে ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যেখানে ঢাকা জেলাধীন সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ডোমনা, দক্ষিণ বাড়ৈবাড়ী, পশ্চিম পানিশাইল, দক্ষিণ পানিশাইল, শিবরামপুর ও ডোমনাগ মৌজাকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত করা হয়। পরে এ বিষয়ে আপত্তি তোলেন শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম আজহারুল ইসলাম সুরুজ। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগ সেই আপত্তি আমলে না নেওয়ায় ২০১৫ সালে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি।
আদালত আদেনকারীর আপত্তি নিষ্পত্তি করার আদেশ দেন। কিন্তু বিষয়টি নিষ্পত্তি না করেই ২০১৬ সালে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে এ ছয়টি মৌজা শিমুলিয়ার মধ্যেই ছিল। নির্বাচনে আজহারুল ইসলাম চেয়ারম্যান হিসেবে পুননির্বাচিত হন।
এদিকে গত ৪ মার্চ নির্বাচন কমিশন ছয়টি মৌজাকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে রেখে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। আর ৩ এপ্রিল গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। পরে এই নির্বাচন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন, তফসিল ও ২০১৩ সালের সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত গেজেট চ্যালেঞ্জ করে আবারও রিট করেন এবিএম আজহারুল ইসলাম।
চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম বলেন, শুধু ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এই মৌজাগুলোর লোকজনকে সেখানকার ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তারা এখনো আমার ভোটার।