৩৯ দফা ঢাকা ঘোষণা রোহিঙ্গাসহ সব মানবিক সংকট সমাধানে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর প্রত্যয়ে শেষ ওআইসি সম্মেলন
তরিকুল ইসলাম : রোহিঙ্গাসহ বিশ্বব্যাপি মানবিক সংকট সমাধানে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর প্রত্যয়ে শেষ হল ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) ৪৫ তম পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ঢাকা সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দু’দিন ব্যাপি সম্মেলনটি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শনিবার ও রোববার অনুষ্ঠিত হয়। আগামীতে ভারতকে ওআইসির পর্যবেক্ষক হিসেবে রাখতে সম্মেলনে প্রস্তাব রেখেছে বাংলাদেশ। সংস্থাটির পরবর্তী সম্মেলনটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ আগামী এক বছর ওআইসি সিএফএম’র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবে।
৩৯ দফা ঢাকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে ১২০টির বেশি রেজ্যুলুশন গ্রহন করে ওআইসি’র সদস্য রাষ্ট্রগুলো। যার মধ্যে রোহিঙ্গা সংকট, প্যালেস্টাইন ইস্যু, সিরিয়া পরিস্থিতি, বিশ^ব্যাপি মানবিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সংকট ওআইসির সংস্কার, নারী ও যুব সম্প্রদায়ের উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল রোববার এক বার্তায় জানান হয়, সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৪টি নতুন প্রস্তাব দেয়া হয়। এগুলো হচ্ছে, আঞ্চলিক উন্নয়নে আরো সংযোগ বাড়ানো, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে গণমাধ্যম খাতের উন্নয়ন, ওআইসির সংস্কার (তুরস্কের সঙ্গে যৌথভাবে) এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ওআইসি চেয়ার সৃষ্টি করা। ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, ‘টেকসই শান্তি, সংহতি ও উন্নয়নে ইসলামিক মূল্যবোধ।’ সম্মেলনে ৫৮ দেশের ৬০০ প্রতিনিধি অংশ নেয়। যার মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের ২২ জন, প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ের ১৩ জন, পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ৬ জন এবং রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের ১৬ জন ছিল। এ ছাড়া এবারের সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড অংশ নেন। ঢাকায় এসেই ওআইসির সদস্যভুক্ত দেশের প্রতিনিধিরা গত শুক্রবার সকালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের একাধিক শিবির পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে ৫টি সুনির্দিষ্ট বিষয় প্রস্তাব করেন। এগুলো হচ্ছে, ইসলামের মূল বিশ^াসের ওপর আস্থা রাখা। শান্তিপূর্ণভাবে দেশে দেশে চলমান সংঘর্ষের অবসান ঘটান। স্বীয় চেতনাবোধ জাগিয়ে তোলা, যাতে আলোকিত জীবন-যাপন করা যায়। দারিদ্রতা এবং মানবিক সংকট দুর করতে উন্নয়ন নিশ্চিত করা। ইসলামি মূল্যবোধকে জাগিয়ে তোলা, যাতে শান্তি, ন্যায়বিচার, সমতা নিশ্চিত করা যায়। সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কটের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে জবাবদিহীতার আওতায় আনতে একটি মিনিস্ট্রিয়াল কমিটি গঠনের প্রস্তাব পাস করা হয়। সম্মেলনের ফাঁকে বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রায় ৪০টি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওআইসি মহাসচিব ইউসেফ এ ওথাইমেন বলেন, এডহক কমিটি “গুরুত্বপূর্ণ” এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সমন্বয় সাধন এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। রোহিঙ্গারা আমাদের ভাই ও বোন। তাদের সমস্যা দূর করতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এই বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বজায় রাখা জরুরী। এটি শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্যই নয় বরং বিশ্বের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ সংকট। এটি ধর্মীয় দ্বন্দ্ব নয়, এটি একটি মানবিক ও মানবাধিকার বিষয়ক সমস্যা। তাই এ নিয়ে সবার উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।