সামগ্রিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ধূমপান ছাড়তে হবে
সুভাষ সিংহ রায়
মাদকাসক্তির বড় কারণ মাদকের সহজলভ্যতা, মাদকের প্রতি তরুণ প্রজন্মের কৌতূহল ও নিছক মজা করার প্রবণতা, মাদকের কুফল সম্পর্কে প্রকৃত ধারণার অভাব, মাদক বিষয়ে ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি, পরিবারের ধরন, বাবা-মায়ের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি, বন্ধুদের চাপ প্রভৃতি। আবার পারিপার্শ্বিক কারণের মধ্যে মাদক নিয়ে স্মার্ট হওয়ার প্রবণতাও অনেক কে ঠেলে দেয় মাদকের জগতে। বন্ধু-বান্ধবের চাপে পড়ে, তাদের সঙ্গ দিতে গিয়ে এবং তাদের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকে মাদক গ্রহণে বাধ্য হয় এবং একপর্যায়ে আসক্ত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ নিজেকে স্মার্ট দেখানোর জন্য মাদক নেয়, কেউ নিছক মজা করে একবার দু’বার নিতে নিতে আসক্ত হয়ে পড়ে। বেকারত্ব, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, ব্যবসায় ক্ষতি, পরীক্ষায় ফেল ইত্যাদি নানা কারণে মাদকের কাছে আশ্রয় নেয় তরুণ-তরুণীরা। সিগারেট দিয়েই শুরু হয় নেশার জগতে প্রথম প্রবেশ। তাই সিগারেটকে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হলেও এটা মাদকের জগতে প্রবেশের মূল দ্বার খুলে দেয়। তাই ধূমপানও হতে পারে মাদকাসক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। একটা পর্যায়ে শরীর ও মন এমনভাবে মাদক নির্ভর হয়ে পড়ে যে, চিকিৎসা ছাড়া আর কোনো ভাবেই মাদকমুক্ত হওয়া সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে পরিবারের খেয়াল রাখা জরুরী। পরিবারের করণীয়, পারিবারিক পরিবেশ হতে হবে ধূমপানমুক্ত। সন্তানদের কার্যকলাপ এবং সঙ্গীদের ব্যাপারে খবর রাখতে হবে। সন্তানরা যেসব জায়গায় সবসময় যাওয়া-আসা করে, সে জায়গাগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। সন্তানদের সঙ্গে খোলামেলা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে, যাতে করে তারাই নিজে থেকে তাদের বন্ধু-বান্ধব সম্পর্কে আলোচনা করে। পরিবারের সব সদস্যই ড্রাগের ক্ষতিকারক বিষয়গুলো সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবেন । মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে সাংগঠনিক দক্ষতা, ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ও কর্মসূচির ধারাবাহিকতার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। মাদকাসক্তি নিরাময় প্রক্রিয়ায় শরীরের সঙ্গে মাদকের জৈব-রাসায়নিক নির্ভরশীলতা দূর হয়ে শরীর তার নিজস্ব গতি প্রকৃতিতে ফিরে এলেও মাদক গ্রহণের মূল প্রভাবক ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, চরিত্র, মনস্তাত্ত্বিক প্রবণতা, আবেগ, অনুভূতি, চিন্তাধারা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অসঙ্গতি দূর করার জন্য নিরাময় কেন্দ্র গুলোতে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা, কাউন্সিলিং ও থেরাপি প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিশেষে মনে রাখতে হবে, নিকোটিন ও অ্যালকোহলও মাদক হিসেবে স্বীকৃত। এই মাদক ক্ষতি করে দেহ-মন, ধ্বংস করে পারিবারিক সম্প্রীতি, সন্তানদের ঠেলে দেয় মাদক গ্রহণের ঝুঁকিতে। সামগ্রিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ধূমপান ছাড়তে হবে, ছাড়তে হবে মদ্যপানও।
পরিচিতি : কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ/মতামত গ্রহণ : নৌশিন আহম্মেদ মনিরা / সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ