ফরিদপুরে জোড়া লাশ উদ্ধার পরকীয়া সম্পর্ককে টার্গেট করেই তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ
জাফর আহমদ ও সুজন কৈরী : ফরিদপুরে ব্যাংক কর্মকর্তা ফারুক হাসান ও শিক্ষিকা সজিয়া বেগমের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনও পায়নি পুলিশ। দুজনেরই লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনা তদন্তে পরকীয়াসহ বিভিন্ন
এদিকে এ হত্যাকোন্ডের বিচারের দাবিতে সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের সামনের সড়কে গতকাল দুপুরে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে একটি শোক শোভাযাত্রা নিয়ে তারা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেন। সাজিয়ার মা নাসিম আরা শেখ, ভাই শেখ সাইজাদসহ স্বজনেরা কলেজ ক্যাম্পাসের মানববন্ধন কর্মসূচিতে এলে তাদের আহাজারীতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। মানববন্ধনে সাজিয়ার মা নাসিমা আরা শেখ কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, কেন এমন হলো, আমার মেয়েকে কে খুন করল? আমি এ খুনের বিচার চাই।
অপরদিকে ফারুক ও সাজিয়া বেগমের লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনও হাতে পায়নি পুলিশ। তবে সুরতহাল প্রতিবেদনে পুলিশ জানায়, দুজনের দেহেই ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ফারুক হাসানের লাশ ঘরের সিলিং ফ্যানের হুকের সঙ্গে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলন্ত ছিল। আর সাজিয়া বেগমের লাশ ছিল মেঝেতে। সাজিয়াকে হত্যা করে ফারুক আত্মহত্যা করে বলে যেমন সন্দেহ রয়েছে, আবার দুজনকেই হত্যা করা হয়েছে সেই সন্দেহও ফেলে দিচ্ছে না পুলিশ। দুদিন আগে থেকে সাজিয়ার স্বামী শহিদুল ইসলাম ফরিদপুরে অবস্থান করায় সন্দেহের তীর তার দিকেই বেশি বলে জানিয়েছেন পুলিশে একাধিক সূত্র।
কোতোয়ালি থানার ওসি এএফএম নাসিম জানান, তারা পরকীয়ার সম্পর্ককে প্রধান টার্গেট করে তদন্তে এগোচ্ছেন। হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় সাজিয়ার স্বামী শহিদুল ইসলামকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিনি আরো বলেন, পরকীয়া সম্পর্কের জেরেই তৃতীয় কেউ এই খুন করেছে ধারণা করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে শহিদুলের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অন্যদিকে ঢাকায় সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের লিগ্যাল ম্যাটারস বিভাগে গিয়ে ফারুক হাসানের কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষিকা সাজিয়া বেগমের সঙ্গে ফারুক হাসানের বিয়ে হয়েছিল। ফারুকই সহকর্মীদের বিষয়টি বলেছিলেন। তবে বিয়ের স্বপক্ষে কোনো কাগজ-পত্র দেখাননি। অফিসিয়ালি নিজেকে অবিবাহিত বলেই জানাতেন। গত বৃহস্পতিবার অফিস অফিসের সহকর্মীদের বলে গিয়েছিলেন, তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য ফরিদপুরে যাবেন। সেখানে যাবার পর গত শুক্রবার তার একজন সহকর্মীকে ফারুক বলেছিলেন, তিনি জরুরী কাজের জন্য দুদিন ফরিদপুরে থাকবেন। সেখান থেকে দুদিনের ছুটি চেয়ে একটি আবেদন ই-মেইলে পাঠালে তার ছুটিও মঞ্জুর হয়। গত সোমবার পর্যন্ত তিনি ছুটিতেই ছিলেন। গতকাল তার কর্মস্থলে যোগ দেয়ার কথা ছিল।
ব্যাংক কর্মকর্তা ফারুক হাসানের বড় ভাই সোহরাব হোসেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মোহাম্মপুর থানায় এএসআই হিসেবে কর্মরত। চাকরী হওয়ার পর তার বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজার কথা বললেই সে বলতো- ‘ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বিয়ে করবো। ঘটনার একদিন আগে তার সঙ্গে ফোনে কথা হলে সে অফিসে আছে বলে জানায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নাজিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি কোনো সময়ই ফারুক পরিবারকে জানায়নি। বিষয়টি হত্যাকান্ডের পর পরিবারের লোকজন জানতে পারে।