কুসংস্কারের কারণে চুরি হয় বজ্রপাতে মৃতের লাশ
আসিফুজ্জামান পৃথিল : ঝড় ও বৃষ্টির সময় দেশের বিভিন্ন এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনায় যেমন আতঙ্ক বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃতদেহ চুরির আতঙ্ক।
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায় গত সপ্তাহে বজ্রপাতে মারা যায় স্থানীয় যুবক মতিন ম-ল। কিন্তু তাকে কবর দেয়ার পর মৃতদেহ চুরি হয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় রাত জেগে কবর পাহারা দেয় তার পরিবারের স্বজন ও আশে-পাশের অন্যান্যরা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে এতটাই আতঙ্ক তৈরি হয় যে পরদিনই তারা কবরটি সিমেন্ট দিয়ে পাকা করে ফেলে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা হাসিনা বেগম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সেখানকার মানুষজনের মধ্যে মৃতদেহ চুরির গুজব ছড়িয়ে পড়ে। আমরাও খবর পেয়ে লোক পাঠাই। তারা বলে যে এরকম চেষ্টা হয়েছিল। ফলে ওইদিন কবর দিয়েও তারা রাত জেগে পাহারা দিয়েছে। পরের দিন কবরটি পাকা করে ফেলে।”
এমন আতঙ্ক কেন জানতে চাইলে ওসি হাসিনা বেগম বলেন, ‘বজ্রপাত হলে লাশ চুম্বক হয়ে যায় বলে এলাকায় মানুষের মাঝে একধরনের গুজব রয়েছে। এ কারণে অনেকসময় মৃতদেহ চুরির আশঙ্কা দেখা যায়’।
গ্রাম এলাকায় এ ধরনের আতঙ্ক নতুন নয়। কবর থেকে বজ্রপাতে নিহত নারী কিংবা পুরুষের মরদেহের কঙ্কাল চুরি যাওয়ার খবর পত্র-পত্রিকাতেও এসেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘এর পেছনে কারণ একধরনের মিথ্যা বিশ্বাস।’ মাহমুদ আরও বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন, বজ্রপাতে নিহত মানুষের শরীরে মূল্যবান জিনিস তৈরি হয়। তারা হয়তো ধারণা করে লোহার ভেতর দিয়ে ইলেক্ট্রিসিটি প্রবাহিত হলে যেভাবে লোহা চুম্বক হয়ে যায়, এক্ষেত্রেও সেরকম কোনকিছু হয়। কিন্তু এটা তো পুরোটাই অন্ধবিশ্বাস।’ এসব কারণেই অনেকসময় মানুষ মৃতদেহ চুরির চেষ্টা করে।
গ্রাম্য অনেক কবিরাজ বা ওঝা’র ঝাড়ফুঁক কাজের জন্য এই ধরনের মৃতদেহের হাড়-গোড় দরকার মনে করে আর সে ধরনের কুসংস্কার থেকেও এই মৃতদেহ চুরির ধারণাটি চলে আসছে বলে অনেকেই মনে করেন।
ড: সোহেল মাহমুদ জানান, আসলে ইলেকট্রিক শক খেয়ে মানুষের মৃত্যু হলে মৃতদেহ যেমন হয় বজ্রপাতে মৃত মানুষের মৃতদেহ ঠিক একইরকম হয়। কোনও পার্থক্য থাকে না। বিবিসি