মহাকাশে যোগাযোগ উপগ্রহ পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের ৫৭তম ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান নিয়ে কক্ষপথে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১
হুমায়ুন কবির খোকন: ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান নিয়ে কক্ষপথের দিকে ছুটছে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে বাংলায় ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগানটি লেখা রয়েছে। দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ কক্ষপথে পাঠানোর মাধ্যমে মহাকাশে যোগাযোগ উপগ্রহ পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হলো বিশ্বের ৫৭তম দেশ।
বাংলাদেশ উপলক্ষ্য করলো এক মাহেন্দ্রক্ষণ। আকাশ প্রযুক্তিতে ইতিহাস সৃষ্টি হলো। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ডানা মেললো আকাশে। বাংলাদেশের ইতিহাসে যোগ হলো সাফল্যের আরেকটি মাইলফলক।
যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানি ‘স্পেসএক্স’ ১০ মে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ১টা ৪৭ মিনিট থেকে ৪টা ২২ মিনিটের মধ্যে স্যাটেলাইটটি কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকে স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ হয়ে আজ কক্ষ পথে রয়েছে। গাজীপুরের গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্লোরিডায় উৎক্ষেপণ কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত ছিলেন। আর ক্যাপ ক্যানাভেরালে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। স্যাটেলাইটের জন্য মোট ব্যয় হয়েছে ২,৯৬৭ কোটি টাকা, এরমধ্যে এইচএসবিসি ঋণ হিসেবে ১,৫৮৫ কোটি টাকা সরবরাহ করছে।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম (সাবেক টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী), তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ৩০ সদস্যর প্রতিনিধি দল ফ্লোরিডাতে ছিলেন। তারানা হালিম বৃহস্পতিবার বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হয়ে আকাশ পথে থাকবে। স্পেসএক্স এবারই প্রথম উপগ্রহ উৎক্ষেপণে তাদের ফ্যালকন-৯ রকেটের ব্লক ৫ সংস্করণ ব্যবহার করতে যাচ্ছে। তিন হাজার ৫০০ কেজি ওজনের জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ফ্যালকন-৯ কক্ষপথের দিকে ছুটবে কেনেডি স্পেস সেন্টারের ঐতিহাসিক লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯-এ থেকে, যেখান থেকে ১৯৬৯ সালে চন্দ্রাভিযানে রওনা হয়েছিল অ্যাপোলো-১১। বিটিআরসি সূত্রমতে, বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ যে ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়, এ উপগ্রহ উৎক্ষেপণের সেই অর্থ সাশ্রয় হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।
এদিকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এক বিবৃতিতে বলেছেন, দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো অনুষ্ঠান সম্প্রচারের জন্য বিদেশি স্যাটেলাইট ব্যবহার করায় যে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়, ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইট চালু হলে তা বেঁচে যাবে। পাশাপাশি দেশের প্রথম এই কৃত্রিম উপগ্রহের বাড়তি সক্ষমতা ভাড়া দিয়ে বিদেশি মুদ্রা আয়ও হবে বলে মনে করেন তিনি। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রচার, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। তিনি বলেন,আমরা আমাদের দেশের সকল টিভি চ্যানেলের চাহিদা মিটিয়ে আমাদের স্যাটেলাইট অন্যান্য দেশের টিভি চ্যানেলের জন্য ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করতে পারবো। আমাদের স্যাটেলাইটে মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। বর্তমানে যে চাহিদা রয়েছে তা পূরণ করেও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে যে, অনন্ত ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিদেশিদের জন্য ভাড়া দেব। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ বা দুর্গম পাহাড়ী এলাকা যেখানে ফাইবার অপটিক দিয়ে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া কঠিন, সেসব জায়গায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে খুব সহজেই পৌঁছানো সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।
পলক বলেন,এর বাইরেও যোগাযোগ স্যাটেলাইট তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়। দুর্যোগের সময় ভূমিকেন্দ্রিক যোগযোগ ব্যবস্থা অকার্যকার থাকলেও স্যাটেলাইট তখন কার্যকর থাকে। শুধু তাই নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে-পরেও স্যাটেলাইট যোগাযোগ খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এই উদ্যোগের জন্য প্রতিমন্ত্রী পলক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন।
সূত্রমতে,বাংলাদেশে প্রতিবছর বেসরকারী স্যাটেলাইট টেলিভিশন, টেলিযোগাযোগ এবং রেডিও যোগাযোগের জন্য প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার খরচ করে। নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ফলে সম্প্রচারে জন্য বছরে প্রায় ১ শ’ ১০ থেকে ১ শ’ ২০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মেজবাহউজ্জামান বলেন, ফ্যালকন-৯ রকেট ৩.৫ মেট্রিক টন ওজনের বঙ্গবন্ধু-১ যোগাযোগ স্যাটেলাইটটি মহাকাশে নিয়ে যাবে। মহাকাশে নির্দিষ্ট স্লটে এটির পৌঁছাতে ৮ দিন সময় লাগবে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের বিষয়টি বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে।