প্রসঙ্গ: ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন
প্রভাষ আমিন
এখন ছাত্রলীগের সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় হলো অনুপ্রবেশ। সৈয়দ আশরাফ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকার সময় বলেছিলেন, ছাত্রলীগে শিবির ঢুকে পড়েছে। কিন্তু ঢুকে পড়া সেই শিবিরকে বের করার কোনো চেষ্টা করেননি কেউ। সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ও ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। ছাত্রলীগের দুঃসময়ের সৈনিকদের একজন আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম অনুপ্রবেশ নিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আজকাল কথা প্রায়ই শুনছি, তা হল ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারীর সমাগম ঘটেছে। অবাক লাগছে তাই না? আমি অবাক হই না। সর্বক্ষেত্রে দেখতে দেখতে অভ্যাস হয়ে গেছে। কোথায় নাই তারা? আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, সংসদ, মন্ত্রিসভা কোথায় নাই অনুপ্রবেশকারী। ’৭৫ এর পর যাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে করতে পরিণত হয়েছি তাদের অনেককেই দলে, সংসদে এবং সরকারে গুরুত্বপুর্ণ অবস্থানে দেখে দেখে নিজেকেই এখন অনুপ্রবেশকারী মনে হয়। কম বয়সে ছাত্রলীগে ঢুকে পড়ে বলে অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করা কঠিন। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে যারা অনুপ্রবেশকারী তারা প্রখ্যাত এবং কুখ্যাত, পরিচিত এবং চিহ্নিত। তবুও দোষ শুধু ছাত্রলীগের। তারপরও আশা করব ছাত্রলীগ নির্ভেজাল থাকবে। কারণ, ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু, আর সাংগঠনিক নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।’ আলাউদ্দিন নাসিমের যখন নিজেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী মনে হয়, তখন অনুপ্রবেশের ইস্যুটি আরো গভীরভাবে ভাবা, বিবেচনা করা এবং পরিচ্ছন্ন করা দরকার। ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশের জন্য সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের সুপারিশকে দায়ী করেছেন সংগঠনের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন।
সাম্প্রতিক আরেকটি ইস্যু আলোচিত হচ্ছে- সিন্ডিকেট। এ নিয়ে অনেকদিন ধরেই ফিসফাস হচ্ছিল। কিন্তু ওবায়দুল কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনে গিয়ে বলে এসেছেন সিন্ডিকেট আর চলবে না, পকেট কমিটিও হবে না। তার মানে এতদিন ছাত্রলীগের নেতৃত্ব এসেছে কারো পকেট বা সিন্ডিকেট থেকে। তবে মনে হচ্ছে, এবার কমিটি আসবে শেখ হাসিনার কাছ থেকে। ২০০৬ সালের পর গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়ে আসছে। সর্বোচ্চ বয়সসীমা, নিয়মিত ছাত্রত্ব ইত্যাদিও অনুসরণ করা হয়েছে কঠোরভাবে। তাই নিয়মিত ছাত্ররাই এখন নেতৃত্ব দেন। কিন্তু নিয়মিত ছাত্র হলেও সে কতটা ছাত্রলীগ তা নিয়েই ফিসফাস। ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন- শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু বাস্তবে তা সংগঠনের জন্য কার্যকর ফল বয়ে আনে না। কৌশলগত ও বানানো জনপ্রিয়তার কাছে বাদ পড়ে যায় যোগ্য, দক্ষ ও ত্যাগী নেতারা।
এবার তাই ভোট হচ্ছে না, এটা প্রায় নিশ্চিত। সাম্প্রতিক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার কথায় তারই ইঙ্গিত, ‘ভোটের আবার কিছু ভালোও আছে, মন্দও আছে। আমরা চাই উপযুক্ত নেতৃত্ব এবং ছাত্র। যদি দেখা যায় ভোটের মাধ্যমে উল্টাপাল্টা আসে, তাহলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না।’ এখন পর্যন্ত সভাপতি পদের জন্য ১১১ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ২১২ জন মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তবে শীর্ষ নেতৃত্ব বেছে নিতে নানা পর্যায়ে তালিকা সংক্ষিপ্ত করে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। শুধু ব্যক্তি নয়, প্রার্থীর ব্যক্তিগত আদর্শ, পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড বিবেচনা করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে, সিন্ডিকেট ভাঙতে এবার অনেক সতর্ক আওয়ামী লীগ। কারণ, আওয়ামী লীগের বিবেচনায় নির্বাচনের বছরে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বোঝা হয়ে ওঠা ছাত্রলীগ যেন আবার রাজনীতির সম্পদ উঠতে পারে, সে চেষ্টাই দেখা যাচ্ছে সংগঠনের ২৯তম সম্মেলনকে সামনে রেখে। দেখা যাক চেষ্টা সফল হয় কি-না। নাকি লাঠিয়াল লাঠিয়ালই যায়।
পরিচিতি : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ/ফেসবুক থেকে