লক্ষ্মীপুরে বৃষ্টিতে পঁচে যাচ্ছে সয়াবিন
জহিরুল ইসলাম শিবলু,লক্ষ্মীপুর : সয়াবিনের রাজধানী হিসেবে খ্যাতি রয়েছে লক্ষ্মীপুরের। এ হিসেবে লক্ষ্মীপুরকে ব্র্যান্ডিংও করা হয়েছে ‘সয়াল্যান্ড’ নামে। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এ জেলায় সয়াবিনের চাষ হয়ে আসছে। বছরের পর বছর বাম্পার ফলন হওয়ায় ব্যাপকভাবে সয়াবিন চাষ হয় এ জেলায়। দেশের মোট উৎপাদনের ৮০ ভাগ সয়াবিন হয় এখানে। কম খরচে অল্প সময়ে অধিক ফলন ও বেশি লাভ হওয়ার কারণে চাষীদের সয়াবিন চাষে আগ্রহ বেশি। তবে গত দুই-তিন বছর ধরে ঝড়-বৃষ্টিতে সয়াবিন ঘরে তুলতে না পারায় চাষীরা সয়াবিন চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। গেল বছর ফসল কাটার আগেই চাষীদের সর্বনাশ হয়েছিল বৃষ্টিতে। এবারও সয়াবিন ঘরে উঠার আগেই এ অঞ্চলে গত কয়েকদিন যাবৎ টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে উৎপাদিত প্রায় ১হাজার হেক্টর জমির সয়াবিন পঁচে গেছে। জেলার কমলনগর, রামগতি, রামগঞ্জ ও সদরে উৎপাদিত পাকা সয়াবিন ক্ষেতে পানি জমে রয়েছে। ক্ষেতে পানি জমে থাকায় কাটা যাচ্ছে না সয়াবিন। পঁচে যাওয়ার ভয়ে অনেকে আবার শুষ্ক জমির কাঁচা সয়াবিন কেটে নিচ্ছেন। এ বছরও সয়াবিনে লাভবান না হওয়ার আশংকায় রয়েছেন কৃষকরা। এতে দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে সয়াবিন চাষীদের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পাকা-আধাপাকা সয়াবিন পানিতে ডুবে গেছে। পঁচে যাচ্ছে কাঙ্খিত ফসল। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণেও পাকা সয়াবিন ঘরে তোলা যাচ্ছে না। তাছাড়া এখনও ফসলের মাঠে অর্ধেকের বেশি সয়াবিন কাঁচা। পাকার আগেই পানিতে ডুবে পঁচন ধরছে এসব সয়াবিনে। চলতি রবি মৌসুমের শুরুর দিকে ৭ ডিসেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অসময়ের তুমুল বৃষ্টির পানিতে ডুবে গিয়েছিল জমি।
পরে কাদাপানি জমে থাকায় যথা সময়ে চাষীরা জমিতে লাঙল দিতে পারেননি। এর প্রভাবে জমি চাষের উপযোগী হতে এক থেকে দেড় মাস সময় পার হয়ে যায়। পরে মৌসুমের শেষের দিকে এসে সয়াবিন আবাদ করতে হয়েছে। যে কারণে জেলায় সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন সম্ভব হয়নি। আর সেই বিলম্বের কারণে এখন আগাম বর্ষার বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে আধাপাকা ফসল।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও সদর উপজেলায় ৫০ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে অসময়ে তুমুল বৃষ্টির কারণে তা অর্জন হয়নি, আবাদ হয়েছে ৪১ হাজার ২৭০ হেক্টর জমি। এখন তাও আবার আগাম বৃষ্টির কারণে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে কৃষকদের।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বেলাল হোসেন খান বলেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে প্রায় ১হাজার হেক্টর জমির উৎপাদিত সয়াবিনের ক্ষতি হয়েছে। উৎপাদনের হিসাবে এবার সয়াবিন চাষীরা লাভবান হওয়ার কথা। তবে বৃষ্টির পানি জমে সয়াবিন পঁচে যাওয়ায় অনেক কৃষকের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। পানি নিষ্কাসনের ব্যবস্থা না থাকায় এমনটা হয়েছে বলে ধারণা করেন তিনি।