রাজধানীর ওয়েস্ট বিন প্রকল্প: কোথাও ভাঙা, কোথাও উধাও!
শাকিল আহমেদ: রাজধানী ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে বড় কোন ভুমিকা রাখতে পারছে না দুই সিটি কর্পোরেশনের মিনি ওয়েস্ট বিন প্রকল্প। কোথাও ভেঙ্গে পড়ে আছে, আবার কোথাও শুধু স্ট্যান্ড থাকলেও বিন উধাও। এজন্য নাগরিক অসচেতনতা ও কর্তৃপক্ষের উদাসিনতাকেই দায়ী করলেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা নগরীকে পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে সিটি কর্পোরেশন যতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছিলো এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো মিনি ওয়েস্ট বিন প্রকল্প। ক্লিন সিটি ক্লিন ঢাকা অভিযান এমনকি গিনেস বুকে নাম লেখানোর জন্য সম্প্রতি ১৫ হাজার কর্মী নিয়ে রাস্তা ঝাড়– দিয়েছেন দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন। কিন্তু শহর পরিস্কারে কোন পদক্ষেপই যেন কাজে আসছে না।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, অনেক স্থানে ফুটপাত উন্নয়ন কাজের জন্য কিছু বিন খুলে রাখা হয়েছে যা শিগগিরি আবার প্রতিস্থাপন করা হবে। এছাড়া অনেকেই এগুলো খুলে নিয়ে বাসাবাড়িতে ফুলের টব বানিয়েছে। নাগরিক সচেতনতার অভাবেই এমনটা হচ্ছে। আবাসিক এলাকা গুলোতে মানুষ বিনে ময়লা ফেলতে শুরু করেছে, কিন্তু ঘনবসতি এলাকাগুলোতে মানুষ এর সঠিক ব্যবহার করছে না। বিনের মধ্যে বাসাবাড়ির আবর্জনা ফেলে রাখে আবার বিন উল্টেও রাখে। সরেজমিনে দেখা যায়, ভেঙ্গে যাওয়া ও চুরি হওয়ায় বেহাল অবস্থা সেগুলোর। রাস্তার পাশে অনেক যায়গায় বিন লাগানোর স্ট্যান্ড পড়ে থাকলেও বিন নেই। আবার কোথাও বিন ভেঙ্গে ও উল্টে পড়ে আছে। ফুটপাত দিয়ে চলার সময় ওয়েস্ট বিন থাকলে পথচারিরা খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট, পানির বোতলসহ যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলছে। এ বিষয়ে নগর বিশেষজ্ঞ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, এখানে নাগরিকদের যেমন সচেতনতার অভাব রয়েছে তেমনি কর্তৃপক্ষেরও দায়িত্ববোধের অভাব রয়েছে। আমরা সবাই নাগরিক অধিকার চাই কিন্তু নাগরিকের দায়িত্ব পালনে কেই সচেতন নই। আবার শুধু গিনেস বুকে নাম লেখানোর জন্য এক মিনিট ঝাড়– দিলেই নগর পরিস্কার ও নাগরিক সচেতনতা হবে না। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, পাশের দেশ ভারতে জনপ্রতিনিধিরা সবাইকে সাথে নিয়ে প্রতিদিন সকালে দুঘন্টা করে পাড়া, মহল্লা ঝাড়– দেয়। কিন্তু আমাদের এখানের চিত্র ভিন্ন। তাই কর্তৃপক্ষ কোন কিছুর উদ্যোগ নিলে সবার আগে সেখানে সমাজ কর্মীসহ সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। না হয় কোন প্রকল্পই কাজে আসবেনা।
জানা যায়, নগরীতে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে নগরী নোংরা না করার জন্য ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময় ফুটপাতের পাশে ৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিএনসিসি এলাকায় ১ হাজার ও ডিএসসিসিতে ৭ হাজার পাঁচশত মিনি ওয়েস্ট বিন বসায় দুই সিটি করপোরেশন। প্রতিটি বিনের মুল্য ধরা হয়েছিলো ৭ হাজার টাকা। শুরুতে আশার আলো দেখলেও এ নিয়ে এখন অনেকটাই হতাশ কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য কর্মকর্তা কমোডর আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মানুষ সচেতন না হলে কোন উদ্যোগই কাজে আসবেনা। আমরা দেখেছি কিছু স্থানে গাড়ির ধাক্কায় বিনগুলো ভেঙ্গে গেছে, আবার কোথাও মাদক সেবিরা চুরি করে নিয়ে গেছে। তাই নতুন করে আর লাগানোর পরিকল্পনা নেই। শহর পরিচ্ছন্ন নিয়ে আমরা দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করছি।