সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে ছাত্রলীগকে শেখ হাসিনার আহবান
আবুল বাশার নূরু: আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকা রয়েছে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছিল। ‘৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর সেনা শাসন থেকে দেশকে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ছাত্রলীগের বহু নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি চাই তোমরা সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন কর।’ তিনি বলেন, ছাত্রলীগে নেতৃত্ব দেওয়ার বয়স ২৭ বছর করা হয়েছিল। এই কমিটি নয় মাস বেশি সময় থাকায় বয়স এক বছর বাড়িয়ে দেওয়া হলো।
গতকাল শুক্রবার ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মন্তব্য করেন। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে তিনি বক্তব্য শুরু করেন। এক বছর বয়স বাড়ানোর কারণে এখন সর্বোচ্চ ২৮ বছর বয়সীরা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসতে পারবেন।
আগামীদিনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে নিজেদের গড়ে তোলার জন্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের যারা নেতৃত্ব ছিলেন তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি। ছাত্রলীগ ছেড়ে যারা অন্য দলে গিয়েছেন তাদেরকে বেঈমান ও কুলঙ্গার বলে আখ্যায়িত করেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট অবশ্যই আকাশে উড়বে। কারাগরি ত্রুটির কারণে নির্ধারিত সময়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আকাশে উড়তে পারেনি। এ নিয়ে দু:চিন্তার কিছু নেই। মাত্র ৪৬ সেকেন্ড আগে কারিগরি ক্রটি দেখা দেয়। আকাশে মেঘ থাকলে কিংবা মেরু পথে বায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে এমনটি হতে পারে। আমি নিজে স্যাটেলাইট উড়া পর্যক্ষেণ করেছি। নির্ধারিত সময়ে যখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আকাশে উড়ল না তখন আমারও মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু আবহাওয়া ও কারিগরি ক্রটি মেনে নিতে হবে। আমরা আকাশ জয় করবই। আজ হোক আর দু’দিন পরে হোক বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আকাশে উড়বেই।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন করে। আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে। দূর্নীতি করে বিদেশে অর্থ পাচার করে। দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করে। বিএনপি-জামায়াতের দূর্নীতির কারণেই এক -এগারোতে সেনা শাসন এসেছিল। শেখ হাসিনা বলেন, সেনা শাসকরা আমাকে গ্রেফতার করেছিল। দেশে আসতে বাঁধা দিয়েছিল । শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা যে ইশতেহার দিয়েছিলাম সেই অনুসারে কাজ করছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের রায় কার্যকর করেছি। দেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। ১৬ টি দেশকে টপকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, আল্লাহপাক যতদিন দেশ সেবা করার সুযোগ দেবেন ততদিন করব। কোন ষড়যন্ত্র করে কেউ তা রোধ করতে পারবে না।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের শিক্ষায় মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে যা যা করার দরকার তা সরকার করে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষাঙ্গণে কোনও সন্ত্রাস মেনে নেব না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা অরাজকতা করবে তারা যে সংগঠনেরই হোক ছাড় দেওয়া হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভনে হামলার নিন্দা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং ও বিরোধের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা নিজেরা গোলমাল করবেন। মারামারি করবেন। আর তাতে ছাত্ররা জড়িত হবে এসব মেনে নেব না। প্রতিটি শিক্ষাঙ্গণ যাতে পরিছন্ন থাকে সে ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের নজর রাখতে হবে।
রাস্তা পারাপারে ও রাস্তা চলাচলে সকলকে সর্তক থাকার অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নিয়ম মেনে রাস্তা পারাপার হতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় আমরাও ব্যথিত হই। কিন্তু যখন দেখি একজন মা তার সন্তানকে নিয়ে চলন্ত গাড়ির সামনে দৌড় দেন তখন অবাক হই। নিজেদের দোষে দুর্ঘটনায় পড়বেন আর এনিয়ে যানবহন ভাংচুর করবেন এ থেকে বিরত থাকুন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখন দেশের উন্নয়ন করে। দেশবাসীর জীবনমান উন্নয়ন হয়। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক যখন দূর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল তখন আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ছিলাম। আমি দূর্নীতি করিনি সেই কারনেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার সাহস পেয়েছিলাম। পদ্মা সেতু আজ আমরা নিজেদের অর্থে করছি।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। উন্নত কোনও দেশ একাজ করার সাহস দেখায়নি। এখন রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ আজ গোটা বিশ্বে ভিন্ন মর্যাদা লাভ করেছে।