ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত করতে দ্রুত মেডিকেল পরীক্ষা করাতে হবে: প্রধান বিচারপতি
এস এম নূর মোহাম্মদ : প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, আমাদের দেশে ধর্ষণের শিকার হলে মেডিকেল টেস্ট করতে অনেক সময় দেরী হয়ে যায়। এতে করে আলামত নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে বিচারের জন্য একমাত্র সাক্ষি-প্রমাণ হলো মেডিকেল রিপোর্ট। তাই ধষণের কোন ঘটনা ঘটলে যত দ্রুত সম্ভব মেডিকেল টেস্ট করাতে পরামর্শ দেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, বলা হচ্ছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় কেবল তিন শতাংশ শাস্তি নিশ্চিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই হতাশ না হয়ে কারণ খোঁজে বের করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে কর্মশালা করার কথাও বলেন তিনি। গতকাল শনিবার “উচ্চ আদালতে সরকারি আইনি সেবা বিচারপ্রার্থীগণের প্রত্যাশা ও জেল আপিল মামলা পরিচালনায় আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা এবং করনীয়” শীর্ষক মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি এই মত বিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন জেলার জেল সুপার, জেলা ও দায়রা জজ, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন, আইনজীবীসহ লিগ্যাল এইড কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।
সুপ্রিম কোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের সভাপতিত্বে এসময় আরও বক্তব্য দেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার এ, এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানী ও জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক মো. জাফরোল হাছান।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় আইনগত সহায়তা পাওয়া কোনো দান বা করুনা নয়। এটা দরিদ্র ও অসহায় মানুষের অধিকার। আর রাষ্ট্রের এক অপরিহার্য দায়িত্ব। মামলার শুনানিকালে বা বিচারের যে কোনো স্তরে যখনই কোনো অসহায় ও নিঃস্ব মানুষকে আইনজীবীবিহীন পাবেন তাকে সঙ্গে সঙ্গে আইনি সহায়তার জন্য লিগ্যাল এইড অফিসে প্রেরণ করুন। জেলা জজগণ বিভিন্ন সময় জেলা কারাগার পরির্দশন করেন। আমি অনুরোধ করব, জেলখানার অভ্যন্তরে থাকা কারাবন্দীদের খোঁজ খবর নিন। তাদের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে জেনে নিন। অনিয়ম থাকলে কর্তৃপক্ষের নজরে আনুন। বিনা বিচারে দীর্ঘদিন আটক আছেন অথবা প্রতিনিধিত্ব বিহীন অবস্থায় কিংবা আইনজীবী না থাকার কারণে মামলা শুনানি করতে পারছে না এরূপ দরিদ্র কারাবন্দীদের আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য উদ্যোগ নিন।
তিনি বলেন, কারাগারের সাথে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন করুন। থানা থেকে আসামিকে কোর্টে হাজির করার সময় জিজ্ঞেস করতে হবে আইনজীবী নিয়োগ করার সমর্থ আছে কিনা। আইনজীবী নিয়োগে অসমর্থ হলে তাৎক্ষণিকভাবে লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে আইনজীবী নিয়োগ করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। লিগ্যাল এইডের মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য আদালতসমূহকে যতœশীল হওয়ার কথা বলেন তিনি। এছাড়া জেল আপিল মামলা নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে পৃথক একাধিক বেঞ্চ গঠন করা যায় কিনা তাও বিবেচনা করার কথা জানান প্রধান বিচারপতি।
এদিকে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আপিল বিভাগের বিচাপরপতি মো.ইমান আলী বলেন, আইনের দৃষ্টিতে সব নাগরিক সমান। তাহলে গরীব অসহায়দের ক্ষেত্রে কেন আইন সঠিকভাবে মানা হচ্ছেনা? সবার দায়িত্ব আইনযাতে সঠিকভাবে প্রয়োগ হয়। কেউ যাতে একদিনও বেশি সাজা ভোগ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, গরীব মানুষের আইনি সেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি সমন্বয়। জেলা জজ ও কারা কর্তৃপক্ষ এবং সুিপ্রম কোর্টের জেল আপিল শাখার মধ্যে সমন্বয় সঠিক হলে উপযুক্ত ও দ্রুত সফলতা পাওয়া সম্ভব হবে। অতিরিক্ত কারা মহা-পরিদর্শক ইকবাল হাসান বলেন, বর্তমানে কারাগারে ৭৯ হাজার বন্দী রয়েছে। এরমধ্যে ৬৩ হাজারই হাজতি। যাদের বিচার কাজ এখনো শেষ হয়নি। আর বাকীরা কয়েদী।