সংসদ চত্বর থেকে চির বিদায় নিলেন ৬ বারের এমপি ‘মুকুল ভাই ছিলেন আদর্শ জনপ্রতিনিধি’
আসাদুজ্জামান সম্রাট: ‘তিনি খুবই ধীরে ধীরে কথা বলতেন। কারো প্রতি উত্তেজিত হতে দেখিনি কোনো দিন। তার চিন্তা ও চেতনায় ছিল এলাকার উন্নয়ন ও দেশের উন্নয়ন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন তিনি। তিনি একজন আদর্শ জনপ্রতিনিধি ছিলেন। তাঁর যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য সংসদ কার্যক্রমকে সমৃদ্ধ করেছে।’
এভাবেই দীর্ঘদিনের সহকর্মী, ৬ বারের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী একেএম মাঈদুল ইসলাম মুকুল সম্পর্কে বলছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ও বিরোধী দলের চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। সংসদ চত্ত্বর থেকে তাঁর এই চিরবিদায়কালে সবাই ছিল বাকরুদ্ধ। তারা বলেন, ‘মুকুল ভাই একজন আদর্শ আইন প্রণেতা ছিলেন। সরকারের মন্ত্রী হিসেবে তাঁর কর্মদক্ষতা ও সততা ছিল অনুকরণযোগ্য।’ গতকাল রোববার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাযার পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় স্মৃতিচারণ করেন তারা। গত ১০ মে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৩৯ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি এক পুত্র ও দুই কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
গতকাল জানাযা শেষে তার কফিনে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি, চিফ হুইপ আ.স.ম ফিরোজ এমপি, বিরোধী দলীয় নেতার পক্ষে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, প্রধানমন্ত্রী’র বিশেষ দূতের পক্ষে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি এবং জাতীয় পার্টি দলের পক্ষ মহাসচিব এ, বি, এম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি’র নেতৃত্বে দলের নেতারা।
এ সময়ে জাতীয় সংসদের হুইপ মো. শহীদুজ্জামান সরকার এমপি, পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, শ্রম ও কর্মসংসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রী মো. মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ এমপি, সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যসহ সর্বস্তরের নাগরিক, রাজনৈতিক সহকর্মী, গুণগ্রাহী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ শরিক হন।
এর আগে গতকাল শনিবার তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরে হেলিকপ্টারে করে নেওয়া হয়। উলিপুর স্টেডিয়াম মাঠে সকাল সাড়ে ১১টায় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিপুল সংখ্যক লোক অংশগ্রহণ করেন। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তৃতীয় এবং বাদ আসর গুলশান আজাদ মসজিদ প্রাঙ্গণে চতুর্থ জানাজা শেষে বাদ মাগরিব বনানী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
ভারতের আসামের কোকড়া ডাঙ্গার সুখের চরে ১৯৪০ সালের ২৯ মে জন্মগ্রহণ করেন মাঈদুল ইসলাম। তাঁর বাবা প্রয়াত আবুল কাসেম পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। মাঈদুল ইসলাম ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত জেনারেল জিয়া, বিচারপতি সাত্তার ও এরশাদের মন্ত্রিসভায় ভুমি, নৌ, পাট, বন ও পরিবেশ, ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগসহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। এরপর তিনি ১৯৯৬, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে কুড়িগ্রাম-৩ আসন (উলিপুর) এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন। মাঝে পুরোনো দল বিএনপিতে ফিরলেও কিছুদিন পর জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন তিনি।