খুলনায় জাতীয় নির্বাচনের আবহ: ইসির অগ্নিপরীক্ষা
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: আসন্ন জাতীয় সংসদের আগে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য অগ্নিপরীক্ষা, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ এবং বিএনপির জন্য নিজেদের শক্তি ও মাঠ যাচাই বলে মনে করা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। ফলে সবার দৃষ্টি খুলনার দিকে। খুলনায় এখন জাতীয় নির্বাচনের আবহ তৈরি হয়েছে।
রাজনীতিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নির্বাচন নিয়ে বেশি টেনশনে আছে ইসি। কারণ জাতীয় নির্বাচনের আগে এই সিটি নির্বাচনের দিকে এখন সবার নজর। নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও ভোটার- সবার কাছে এ নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। আরও চার সিটি করপোরেশন ও জাতীয় নির্বাচনে ভোট কেমন হবে এখান থেকেই তার আভাস মিলবে বলে মনে করছেন তারা।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব:) সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, এখন আরও চারটি সিটির ভোট বাকি, তারপর সংসদ নির্বাচন। সিটি ভোটেই এখন জাতীয় নির্বাচনের আবহ। কমিশনের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ এটি। আর আওয়ামী লীগের জন্য চাপ, কারণ জাতীয় নির্বাচনের আগে ইসির যে কোনো ধরণের ব্যর্থতা সরকারের ঘাড়ে আসবে। আবার দুই বার সরকারে থাকার পরও যদি ফলাফল নেতিবাচক হয় তাহলে সরকারের জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। ফলে ক্ষমতাসীনরা উভয় সংকটে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসিচব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রচার প্রচারণায় বিএনপিকে অনেক বাধা দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীরা মামলা হামলায় জর্জরিত, মাঠেই নামতে পারেনি। কারণ আওয়ামী লীগ জানে তাদের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায়। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে অবশ্যই তিনগুণ ভোট বেশি পেয়ে বিএনপি প্রার্থী জয়ী হবে।
১৪ দলে মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, খুলনায় নিজেদের প্রার্থীর পরাজয়ের বিষয়টি জানে বিএনপি। তাই সব সময় একটা অভিযোগ দায়ের করে যাচ্ছে। শুধু খুলনা সিটি নয় সব কটি নির্বাচন এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে জয়ী হবে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম বলেছেন, কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন যোগ দেওয়ার পর গেল বছর কুমিল্লা ও রংপুর ভোট করে সব মহলের প্রশংসা পেয়েছে। এই নির্বাচনে অনিয়ম থাকলে বা সুষ্ঠু ভোট না হলে এর নেতিবাচক প্রভাব থাকবে সবমহলে। ইসি যদি সেই আস্থা পূরণ করতে পারে তবে সংসদ নির্বাচনের জন্য এটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বেসরকারি নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান জানান, খুলনায় নির্বাচনী পরিবেশ এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক। নির্বাচন কমিশনের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ এ নির্বাচনটি ভালোভাবে সম্পন্ন করার। সামনে জাতীয় নির্বাচন রয়েছে। ইসির সদিচ্ছা ও ক্ষমতার প্রয়োগ মানুষ দেখতে চায়। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ইসির গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, দলগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করতেই পারে। সেই সব অভিযোগ নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে দেখছে ইসি। ইসির কার্যক্রম দেখার জন্য এরই মধ্যে নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা রয়েছেন। পরিস্থিতি অনুযায়ী ইসি পদক্ষেপ নেবে। কমিশন ভালো নির্বাচন করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর। প্রয়োজনে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হবে।
কাল দলীয় প্রতীকে খুলনা সিটি করপোরেশনে ভোট হবে। তাতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, সিপিবি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়রপ্রার্থী রয়েছে।