খুলনায় এগিয়ে তালুকদার খালেক
হিরা তালুকদার ও শরীফা খাতুন শিউলী খুলনা থেকে : বিছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভোট গণনায় ২৪৩ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক এগিয়ে রয়েছেন। তবে কিছু কিছু এলাকায় ব্যালট ছিনতাই, ভাংচুর, জালভোট, জোর পূর্বক সীল প্রয়োগের মত ঘটনাও ঘটে। দুটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়েছে।
২৮৯ কেন্দ্রের মধ্যে রাত ১০টায় প্রাপ্ত ২৪৩টির বেসরকারি ফলাফলে দেখা যায় নৌকার প্রার্থী পেয়েছেন ১,৪৯,৬৫২ ভোট ও ধানের শীষের প্রার্থী পেয়েছেন ৯১,৬৮২ ভোট।
গতকাল সকাল ৮টা থেকে নগর পিতা নির্বাচনের লক্ষ্যে একটানা ভোটগ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নগরীর ২৮৯টি কেন্দ্রে এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকালে নিজ নিজ কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক (নৌকা) ও বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু (ধানের শীষ)। এছাড়া কেসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জাতীয় পার্টি শফিকুর রহমান মুশফিক (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক (হাত পাখা) ও সিপিবি মো. মিজানুর রহমান বাবু (কাস্তে)।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বলেন, ভোট ভালো হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী বলেন, অন্তত ১৫০ কেন্দ্রে অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। জাল ভোটের অভিযোগে একটি কেন্দ্রে ভোট বাতিল, দুটি কেন্দ্র এবং এবং একটি বুথে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। এর বাইরে একটি কেন্দ্রের অদূরে বিএনপির নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়।
জালভোট দেওয়ার পর খুলনা সিটি করপোরেশনের ৩০ নং ওয়ার্ডে দুটি ভোট কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়। এগুলো হলো রূপসা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও রূপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। এর আগে একই ঘটনায় ২৪ নং ওয়ার্ডের সরকারি ইকবাল নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে এবং ২২ নং ওয়ার্ডের ফাতিমা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি বুথে ভোট বন্ধ করে দেয়া হয়।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুচ আলী জানান, কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার বেলা ১২টার দিকে ওই কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে দিয়েছেন। জালভোট দেওয়ার অভিযোগে নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ফাতেমা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বন্ধ ঘোষণা করেন প্রিজাইডিং অফিসার জিয়াউল হক। আরও অন্তত ৫টি কেন্দ্রের বাইরে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে ভাঙচুর ও গোলযোগের খবর পাওয়া যায়।
খুলনার ২৪ নং ওয়ার্ডের ইকবালনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে পোলিং এজেন্টদের বের করে ব্যালট ভরে ভোট দেয়ার অভিযোগ উঠে। ভোট শুরুর এর ঘণ্টাখানেক পর ইকবাল নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের ব্যালট পেপার সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভোটারদের লাইনে অপেক্ষায় থাকা ভোটার বলেন, আমাদের বলা হচ্ছে ব্যালট পেপার নেই। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি। দেখি কতক্ষণ লাগে!
ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষের লোকজন ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকরা। জালভোটের অভিযোগ ওঠার ঘণ্টাখানেক পর প্রিজাইডিং অফিসারের কক্ষ বন্ধ পাওয়ায় সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকদের বাকবিত-া হয়।
পুলিশের উপস্থিতিতে কেন্দ্রের ভেতরে বিএনপির কর্মীরা হট্টগোল করে। কাছেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা যায়। ১১টার দিকে সোনাপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে বিএনপির নির্বচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়।
স্থানীয় যুবদল নেতা আবুল বাশার ও বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতা অ্যাডেভোকেট আক্তার জাহান রুকু অভিযোগ করেন, স্থানীয় যুবলীগ নেতা জাকিরের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন এসে কেন্দ্রের বাইরে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে চেয়ার ভাঙচুর করে এবং কর্মীদের গালাগাল করে।
দরুল উলুম মাদ্রাসার সামনে, আবদুল গণি বিদ্যালয় কেন্দ্রের কাছে এবং নিরালা আবাসিক এলাকায় আরও কয়েকটি কেন্দ্রের বাইরে বিএনপি প্রার্থীর ক্যাম্পে ক্ষমতাসীনরা ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বাশার।
খুলনা সিটি নির্বাচনে ইসির পর্যবেক্ষক দলের প্রধান সমন্বয়কারী ইসির যুগ্মসচিব আব্দুল বাতেন বলেন, আমি অন্তত ২০টি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। সেখানে কেউ অভিযোগ স্বীকার করছে না। কিন্তু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার তথ্য গণমাধ্যম ও নানা সোর্সে পাচ্ছি। যেখানেই অভিযোগ পাচ্ছি, ছুটে যাচ্ছি।
দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া’ ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে বলে মন্তব্য করে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুচ আলী বলেন, ৫/৬টি কেন্দ্রের অভিযোগ এসেছে আমাদের কাছে। আমরা এ বিষয়ে কথা বলেছি। ২৬ ওয়ার্ডের বানিয়াখামার কেন্দ্রে ভোটারদের ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না। ৩০নং ওয়ার্ডের রূপসা স্কুল কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট সেলিম কাজীকে মারধর করা হয়। এছাড়া নগরীর বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ভাংচুর করা হয়েছে ৩১নং ওয়ার্ডের হাজী আব্দুল মালেক ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সামনের নির্বাচনী ক্যাম্পও ভাংচুর করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে মহানগরীর জিলা স্কুল কেন্দ্রে আলী আকবরকে মারধর করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বিকুর সমর্থকরা। পরে তাকে উদ্ধার করে খুলনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কাউন্সিলর প্রার্থী মাহবুব কায়সার বলেন, আমার এজেন্ট আলী আকবর সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে জিলা স্কুল কেন্দ্রে ঢুকতে গেলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ পিকুর লোকজন তাকে মারধর করে। কেন্দ্রে ঢুকতে দেয় না। অপরদিকে, ২২নং ওয়ার্ডের আ’লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ পিকুর ছোট ভাই কাজী বেলায়েত হোসেন নতুন বাজার হাজী আবু হানিফ কেরাতুল কুরআন নূরানী মাদরাসা কেন্দ্রে ধানের শীষের কোন এজেন্ট ঢুকতে দেননি। খুলনা জিলা স্কুল কেন্দ্রের ৮টি বুথেও ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ধানের শীষের কোন এজেন্ট ঢুকতে দেননি। তবে, এ কেন্দ্রের ৬নং বুথে ধানের শীষের এজেন্ট সিরাজুল ইসলাম লিটন মেয়র প্রার্থ নজরুল ইসলাম মঞ্জুর উপস্থিতিতে সকাল ১০টায় কেন্দ্রে ঢুকতে সক্ষম হন । খালিশপুর ১১নং ওয়ার্ডের জামিয়াহ ত্বৈয়্যেবাহ নূরানী তালিমুল কোরআন মাদরাসা কেন্দ্র থেকে সহোদর সিরাজকে কুপিয়ে এবং আলমকে মারধর করা হয়। কলেজিয়াট স্কুলে জাল ভোট দেওয়ার ঘটনার ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। অভিযোগ উঠেছে ২৫ নং ওয়ার্ডের এতিমখানা মোড়ের নূরানি মাদ্রাসায় ভোটারদের হাতে কালি দিয়ে নিজেরাই ভোট দিয়েছে সরকার দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা।