রেলপথে মোবাইল ফোন ব্যবহারে প্রাণ গেছে ৪৫০ জনের
রিকু আমির : ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৪২ কিলোমিটার রেলপথে গত সাত বছরে দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের ৪৫০ জনই মারা গেছেন হেডফোন বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সময়।
সর্বশেষ বুধবার দুপুরে ঢাকার কুড়িল রেললাইনে ষাটোর্ধ্বো বৃদ্ধা ফিরোজাও রেলে কাটা পড়ে মারা যান মোবাইল ফোনে কথা বলার প্রভাবে। ফিরোজার সাথে থাকা ছিলেন তার মেয়ে নাজমা। তিনি প্রাণে বেঁচে যান। স্থানীয় চা দোকানি হাশেম জানান, মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রেললাইন দিয়ে খিলক্ষেতের দিকে হাঁটছিলেন নাজমা। ফিরোজা বেগম হাঁটছিলেন তার পেছনে। ওই সময় কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা একটি রেল তাদের পেছনে চলে আসে। শেষ সময়ে রেল আসার বিষয়টি বুঝতে পেরে নাজমা সরে যেতে পারলেও ফিরোজা রেলের ধাক্কায় মাথায় আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। ঢাকা রেলপথ থানা পুলিশের (জিআরপি) কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, রেলে কাটা পড়ে ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার মানুষ মারা গেছে এই ১৪২ কিলোমিটার রেলপথে।
কমলাপুর জিআরপি থেকে জানা গেছে, ৭ বছরে ১৯ থেকে ৫০ বছর বয়সী মানুষ বেশি কাটা পড়েছেন। এ বয়সে প্রাণহানির সংখ্যা ১৩৮৫ জন। এর মধ্যে ১ থেকে ১৮ বছর বয়সী ২০৩ জন এবং ৫১ থেকে বেশি বয়সের নিহতের সংখ্যা ৩৪৮ জন। কানে হেডফোন লাগিয়ে রেললাইনে হাঁটার সময় বা মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় ৪২২ জন কাটা পড়েছেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ৫৬ জন। রেল লাইনের ওপর বসা বা চলাচলের সময় কাটা পড়েছে ৫৫৪জন, রেলক্রসিং দ্রুত পারাপারের সময় ৮৯৮ জন, রেলের ছাদ থেকে পড়ে ৫৫ জন ও টেম্পুর সঙ্গে রেলের দুর্ঘটনায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ওই জিআরপির ওসি ইয়াসিন ফারুক মজুমদার বলেন, রেলপথে হাঁটতে হাঁটতে মোবাইল ফোনে কথা বলা, ইয়ারফোনের ব্যবহার সর্বোপরি অসচেতনভাবে রেলপথে চলাচলই এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ। এছাড়া রেললাইনের দুপাশ বেদখল হয়ে বসতি গড়ে উঠাও এসব মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। সচেতনতা বৃদ্ধিতে পুলিশ স্বক্রিয়। কিন্তু রেললাইন দিয়ে চলাচলকারীরা সচেতন না হলে এসব মৃত্যু থামানো দুঃসাধ্য।