অভিমত পর্যবেক্ষক মহলের ‘নির্বাচনে বিএনপির শেষ পর্যন্ত থাকা ইতিবাচক’ খুলনায় ইসি ও রাজনৈতিক দলগুলোর শক্তির মহড়া হয়েছে
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনকে ইসি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর শক্তিপরীক্ষার মহড়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক ও পর্যবেক্ষক মহল। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে সংসদের বাইরে থাকা দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ নির্বাচনকে দেশের গণতন্ত্রেও জন্য ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন।
বিএনপি ও দু/একটি মহল ছাড়া বাকি সবাই বলেছেন, নির্বাচন ভালো হয়েছে। কিছু ছোট খাটো ত্রুটি ছাড়া শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন মহল শেষ পর্যন্ত অভিযোগের পাশাপাশি ভোটে থাকার সিদ্ধান্তের জন্য বিএনপিকে অভিন্দন জানিয়েছে। তারা বলেছেন, এই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকার ফলে বিএনপি গণতান্ত্রিক মানসিকতার দিকে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। মোটের উপর রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মাঠ যাচাইয়ের সুযোগ পেয়েছে। আর ইসি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে তাদের যে ত্রুটি ছিলো সেগুলো বুঝতে পেরেছে। জাতীয় নির্বাচনে এটি কাজে লাগবে। রাজনীতিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, এই নির্বাচন নিয়ে বেশি টেনশনে ছিলো ইসি।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব) সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, এখন আরও চারটি সিটি ভোট বাকি, তারপর সংসদ নির্বাচন। বিএনপির এই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকা গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করেন সাখাওয়াত। তিনি বলেন, বিএনপির এই সুমতি যদি জাতীয় নির্বাচনেও থাকে তাহলে মানুষ স্বস্তি পাবে। ইসিরও একটা পরীক্ষা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির যেসব অভিযোগ এটাও গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ বলে মনে করেন সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি ইসিকে আলো শক্তিশালী হওয়ার আহ্বান জানান।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম বলেছেন, কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন যোগ দেওয়ার পর গেল বছর কুমিল্লা ও রংপুর ভোট করে সব মহলের প্রশংসা পেয়েছে। ছোটখাটো কিছু অভিযোগ ছাড়া নির্বাচন ভালো হয়েছে। বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের মন্তব্য ‘ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি, তদন্ত হওয়া দরকার’ এই বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে আবদুল আলীম বলেন, পর্যবেক্ষকরা বড় রকমের অনিয়ম পায়নি যাতে ভোটের ফলাফল উল্টো হয়ে যেতে পারে। তারপরও এই নির্বাচনে যে টুকটাক অনিয়ম হয়েছে তার থেকে ইসির অবশ্যই শিক্ষা নেওয়া উচিত। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে জাতীয় নির্বাচনের আবহ তৈরি হয়েছে।
বেসরকারি নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান জানান, খুলনায় নির্বাচনী পরিবেশ সন্তোষজনকই ছিলো। কিছু কেন্দ্রে জালভোটের অভিযোগ পড়েছে এবং সেগুলো স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া।
১৪ দলে মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, খুলনায় নিজেদের প্রার্থীর পরাজয় হবে জেনেই বিএনপি সকাল থেকেই অভিযোগ ফেঁদে বসেছেন। খুলনার মতো জাতীয় নির্বাচনেও বিএনপিকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। এই দলটি কথা কথায় বিদেশীদের কাছে নালিশ করে। জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু খুলনা সিটি নয় সব কটি নির্বাচন এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে জয়ী হবে। অভিযোগ করে দলটি সংসদ নির্বাচন বয়কট করার পায়তারা করছে। তবে জনগণও তাদেরকে ভোট দেওয়ার জন্য বসে নেই।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসিচব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রচার প্রচারণায় বিএনপিকে অনেক বাধা দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীরা মামলা হামলায় জর্জরিত, মাঠেই নামতে পারেনি। আর নির্বাচনের আগেরদিন রাতে সব ভোটবাক্স ভরে রেখেছে। রাতে ফলাফল ঘোষণা করেছে। কারণ আওয়ামী লীগ জানে তাদের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায়। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যদি হতো অবশ্যই তিনগুণ ভোট বেশি পেয়ে বিএনপি প্রার্থী জয়ী হবে। আমরা এই কমিশনের পদত্যাগ দাবি করে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, দলগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করতেই পারে। সেই সব অভিযোগ নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে দেখছে ইসি।