মাদকবিরোধী অভিযানে ১৫ দিনে ৯ জন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত
সুজন কৈরী : দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযানে চালাচ্ছে র্যাব। গত ১৫ দিনে ৪৭৯টি অভিযান চালিয়ে ৪৮২ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার করেছে প্রায় ২০ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য। মাদকবিরোধী অভিযানে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে ৯ জন সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ী। নিহত সবাই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি করেছে র্যাব।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ মে র্যাবের ১৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে র্যাবকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর গত ৪ মে থেকেই র্যাব বিশেষ অভিযান শুরু করে। ১৮ মে পর্যন্ত ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ২৭১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়াসহ ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ২৫০ টাকা জরিমানা করেছে। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে মাদকসেবী রয়েছেন ১ হাজার ৯৪৪জন ও ব্যবসায়ী রয়েছেন ৩২৭ জন। তবে মূল অভিযান শুরু হয়েছে গত ১৪ মে সোমবার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে। ওই ঘোষণার পর থেকে এখন প্রায় প্রতিদিনই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটছে। ওইদিন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠিনতর ব্যবস্থা নেওয়ার আভাস দেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, মাদক প্রতিরোধে আইনি ব্যবস্থায় যত কাঠামো আছে, তার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করবে র্যাব। ওই সময় তিনি কারো কাছে মাদক থাকলে তা র্যাবের ক্যাম্পের পাশে ফেলে যাওয়ার অনুরোধও জানান।
সূত্র জানায়, মাদকবিরোধী অভিযান চালানোর সময় সর্বশেষ গত শুক্রবার দিবাগত রাতে যশোরের অভয়নগরে র্যাব-৬ এর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় ৩ জন মাদক ব্যবসায়ী। তারা হলেন- আবুল কালাম, হাবিব শেখ ও মিলন কাসারী। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে র্যাব-৫ এর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আবদুল আলীম, একইদিন চট্টগ্রামের বরিশাল কলোনীতে র্যাব-৭ এর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হাবিবুর রহমান প্রকাশ ওরফে মোটা হাবিব এবং মো. মোশাররফ, ১৭ মে রাজশাহীতে র্যাব-৫ এর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আবুল হাসান ওরফে হাসান, ১৫ মে নারায়নগঞ্জে র্যাব-১১ এর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রিপন এবং একইদিন কুষ্টিয়ায় র্যাব-১২ এর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় হামিদুল ইসলাম নামের সন্দেহভাজন আরো এক মাদক ব্যবসায়ী। র্যাব বলছে নিহতরা সবাই শীর্ষ মাদক কারবারী।
এদিকে মানবাধিকারকর্মী ও পুলিশের সাবেক কর্মকর্তারা ‘বন্দুকযুদ্ধ’ কোনো সমাধান হতে পারে না বলে মনে করছেন। তাদের মতে, মাদক ব্যবসায়ীরা ভয়ংকর লোক। সে ক্ষেত্রে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে যদি গোলাগুলিতে কেউ মারা যায়, সেটা ঠিক আছে। কারা ব্যবসা করছে, কারা এদের মদদ দিচ্ছে, এর মূল খুঁজে বের করতে হবে। তাদের আইনের আওতায় এনেই নিয়ন্ত্রণের পথ খুঁজতে হবে।
অপরদিকে গতকাল রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, সরকার মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি (শূন্য সহনশীলতা) অবলম্বন করেছে। মাদক সহনশীল পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান চলবে।