ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮টি ধারায় আপত্তি গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের: সংশোধনের আশ্বাস
আসাদুজ্জামান স¤্রাট : প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’র আটটি ধারার বিষয়ে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে আপত্তি জানিয়েছেন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। সংসদীয় কমিটিও এই ধারাগুলো সংশোধন করে আইন প্রণয়নের আশ্বাস দিয়েছে। সংসদীয় কমিটি বলেছে, সময়ের চাহিদার কারণেই আইনটি দরকার। কিন্তু আইন নিয়ে যাতে কোনো বিতর্ক না হয় সেদিকে বিবেচনায় রেখেই আইন প্রণয়ন করা হবে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের মতামত দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। কমিটির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকোর শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। বৈঠকে প্রস্তাবিত আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা নিয়ে আপত্তি জানানো হয়। বৈঠকে সম্পাদক পরিষদ ও বিএফইউজে’র পক্ষ থেকে লিখিত প্রস্তাব দেয়।
বৈঠক শেষে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকতার অবাধ বিচরণের ক্ষেত্রে যেসব ধারায় বাধা আসতে পারে, সেগুলোতে আমরা তুলে দিতে বলেছি। তা না হলে আমরা গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আন্দোলন করেছি; আমরা সাংবাদিকতা রক্ষার জন্য আন্দোলনে যাব, সেটা বলে এসেছি।
বিএফইউজের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, এই প্রস্তাবিত আইন নিয়ে জাতীয় ও আন্তজার্তিক উদ্বেগগুলো বৈঠকে তুলে ধরেছি। এমন কোনো ধারা যাতে না থাকে যাতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়। তিনি বলেন, এই আইনে এমন ধারা থাকা উচিত সাংবাদিকদের বিচারের ক্ষেত্রে যাতে প্রেসকাউন্সিলের নজরে আনা হয়। প্রেসকাউন্সিই সিদ্ধান্ত নিবে তারা সাংবাদিকতা করেছে না অপসাংবাদিকতা করেছে।
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, আমরা মোট আটটি ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছি। সংসদীয় কমিটি আমাদের সঙ্গে সঙ্গে একমত হয়েছে। কমিটি বিষয়গুলো সহানুভূতি দেখিয়েছে ও আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছে। তিনি আশা করছেন, আইনের কয়েকটি বিষয়ে আমূল পরিবর্তন আসবে। স্বাধীন সাংবাদিকতার সাংবিধানিক যে অধিকার রয়েছে, তার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে কমিটি আমাদের আশ্বস্ত করেছে।
অ্যাটকোর সভাপতি ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বলেন, আমরা আইনের যেসব বিষয় নিয়ে চিন্তিত, সেগুলো কমিটিকে জানিয়েছি। কমিটি আমাদের আশ্বাস দিয়েছে যে তাঁরা আমাদের উত্থাপিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নেবেন। তাঁরা বর্তমানে আইনটি যেভাবে রয়েছে, তা সংশোধন করে সংসদে তুলবেন।
কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত আইনে কিছু অস্পষ্টতা আছে। পরিষ্কার করতে হলে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। সংসদীয় কমিটির পরবর্তী বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। প্রয়োজন হলে আবারও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, শওকত হাচানুর রহমান, কাজী ফিরোজ রশীদ, হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া এবং বিশেষ আমন্ত্রণে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বৈঠকে অংশ নেন। কমিটির আমন্ত্রণে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি গোলাম সারওয়ার, সাধারণ সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের সভাপতি সালমান এফ রহমান, সহসভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু, বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, মহাসচিব ওমর ফারুক বৈঠকে যোগ দেন।