বিশ্বে ৮ম আম উৎপাদনকারী হলেও শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারকের তালিকায় নেই বাংলাদেশ
মতিনুজ্জামান মিটু : বিশ্বের ৮ম উৎপাদনকারি হলেও শীর্ষ দশ আম রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় নেই বাংলাদেশ। ফলের মাছি পোকা ও অতিরিক্ত কার্বেন্ডাজিম ছত্রাকের উপস্থিতিসহ এগারটি বাঁধার কারণে আম রপ্তানিতে কাংখিত সাফল্য আসছে না। বিগত ২০১৪-২০১৫ মৌসুমে ইউরোপিয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে রপ্তানি করা আমে ১৫টি নন কমপ্লিয়েন্স পাওয়া যায়। যার মধ্যে একদিনেই নয়টি নন কমপ্লিয়েন্স পাওয়ার ঘটনা ঘটে। মাছি পোকা ও অতিরিক্ত কার্বেন্ডাজিম ছত্রাকের উপস্থিতিতে ইইউভূক্ত দেশগুলোতে আম রপ্তানি বন্ধের উপক্রম হয়। দেশে আম রপ্তানীর ক্ষেত্রে বিরাজমান এগারটি বাঁধা বা সমস্যার মধ্যে রয়েছে; আমদানিকারক দেশের শর্ত পূরণ না করা, কন্ট্রাক ফার্মিং-এর মাধ্যমে উত্তম কৃষি পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক রপ্তানিযোগ্য, বালাইমুক্ত ও নিরাপদ আম উৎপাদন না করা, রপ্তানি উপযোগি পর্যাপ্ত জাত না থাকা, আম উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার কর্মকর্তাদের দক্ষতা এবং সমন্বয়ের অভাব থাকা, উৎপাদন এলাকায় ফসল সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনার জন্য হিমাগার ও প্যাকিং হাউসের অভাব, বাজারজাতের জন্য পরিবহন উপযোগি সীমিত সংখ্যাক কুলিংভ্যান, নতুন নতুন রপ্তানি বাজার সৃষ্টি করতে না পারা, ল্যাবরেটরির পূর্ণ সক্ষমতা না থাকায় নতুন নতুন দেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি না হওয়া, এরপর পৃষ্ঠা ৭, কলাম
(শেষ পৃষ্ঠার পর) রপ্তানির জন্য রপ্তানিকারকদের মানসিকতা তৈরি না হওয়া বা তাদের এগিয়ে না আসা, আন্তর্জাতিক বিধি বিধান অনুসরণপূর্বক আম উৎপাদন ও রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রস্তুত না থাকা এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির অভাব। ফাওস্টেট ডাটাবেজ’২০১৪ এর হিসেবে বছরে এক কোটি ৫১ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন করে ভারত বিশ্বের শীর্ষ দশটি আম উৎপাদনকারি দেশের মধ্যে প্রথম, ৪৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের দেশ চীন দ্বিতীয় ও ২৬ লাখ মেট্রিক টন আম নিয়ে থাইল্যান্ড তৃতীয় র্যাংকে রয়েছে। ২১ লাখ ৩১ হাজার ১৩৯ মেট্রিক টন আম ফলিয়ে ইন্দোনেশিয়া চতুর্থ, ১৮লাখ ৮৮ হাজার ৪৪৯ মেট্রিক টন আম নিয়ে পাকিস্তান পঞ্চম, ১৮লাখ ২৭হাজার ৩১৪ মেট্রিক টন আম নিয়ে মেক্সিকো ষষ্ঠ, ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৫২১ মেট্রিক টন আমের দেশ ব্রাজিল সপ্তম, আট লাখ ৮৯ হাজার ১৭৬ মেট্রিক টন আমের বাংলাদেশ অস্টম, আট লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আমের নাইজেরিয়া নবম এবং আট লাখ ৫৫১ মেট্রিক টন আমের দেশ ফিলিপাইন দশম র্যাংকে রয়েছে।
সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক (২০১১ ইস্টিমেটস) এর হিসেবে শীর্ষ ১০ আম রপ্তানীকারকে দেশের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় র্যাংকে রয়েছে যথাক্রমে মেক্সিকো, ফিলিপাইন ও পাকিস্তান। শীর্ষ আম উৎপাদনকারি ভারত রয়েছে ওই তালিকার পঞ্চম র্যাংকে। এছাড়া রপ্তানীকারক দেশের শীর্ষ দশের তালিকায় রয়েছে ব্রাজিল চতুর্থ, নেদারল্যান্ডস ষষ্ঠ, পেরু সপ্তম, গুয়েতমালা অষ্টম, ফ্রান্স নবম ও হাইতি দশম র্যাংকে রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেবে ২০১০-২০১১ থেকে ২০১৬-২০১৭ পর্যন্ত ছয় বছরে বাংলাদেশ এক হাজার ৬৯৬ দশমিক ২০ মেট্রিক টন আম রপ্তানী করে।
২০১৬-২০১৭ মৌসুমে বাংলাদেশে এক লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমির গাছে ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪৩ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়। চলতি ২০১৭-২০১৮ মৌসুমে ফলন ভাল হওয়া আম উৎপাদন আরো বেশি হতে পারে। এসব বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক(রপ্তানি) কৃষিবিদ মুহা. আনোয়ার হোসেন খান বলেন, আম উৎপাদন ও রপ্তানির বিরাজমান সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার নানা কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করেছে। ২০১৫ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের নেয়া সিদ্ধান্তের আলোকে অভ্যন্তরীন চাহিদা মিটিয়ে আম রপ্তানির লক্ষ্যে কতিপয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ লক্ষ্য পূরণে বালাইমুক্ত নিরাপদ আম উৎপাদনের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং একটি নীতিমালা তৈরী করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করে এবং এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করে। এতে বালাইমুক্ত ও নিরাপদ আম উৎপাদন, ব্যবহার, বিপনন ও রপ্তানীতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়। এর ধারাবাহিকতা রক্ষায় বালাইমুক্ত ও নিরাপদ আম উৎপাদন এবং বাজারজাত করণের জন্য ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে নতুন করে নীতিমালা তৈরী করা হয়েছে। এতে আম উৎপাদন ও রপ্তানীর বিরাজিত সমস্যা ক্রমান্বয়ে কেটে যাবে।