১০ মাসে কোটি মেট্রিক টন গম-চাল আমদানি
জাফর আহমদ: খাদ্য আমদানিতে সকল রেকর্ড ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। ১০ মাসে প্রায় ২ হাজার ৬৮০ কোটি টাকার কোটি মেট্রিক টন খাদ্য আমদানি হয়েছে। যার মধ্যে শুধু চালই আমদানি হয়েছে ৪৫ লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল ১০ মাসের তথ্য অনুযায়ী, ১ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার ৬৬০ মেট্রিক টন চাল ও গম আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে। এর মধ্যে দেশে এসে পৌছেছে ৮২ লাখ ৩১ হাজার ৬৯৮ মেট্রিক টন। বাকী চাল-গমও মে মাসে বন্দরে পৌছানোর কথা। এ খাদ্য আমদানি করতে ব্যয় করতে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। এ বছর শুধু চালই আমদানি করতে হয়েছে ৪৫ লাখ মেট্রিক টন। গতবছর একই সময়ে চাল আমদানি হয়েছিল মাত্র ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭৩৫ মেট্রিক টন। আর চাল ও গম মিলে আমদানি হয়েছিল ৫০ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪৬ মেট্রিক টন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশেই চাহিদা মত খাদ্য উৎপাদিত হওয়ায় শুল্ক বসিয়ে খাদ্য আমদানি নিরুৎসায়িত করা হয়েছিল।
তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ বছর বৃদ্ধি পাওয়া এই বিপুল খাদ্যপণ্যের পুরোটাই চাল। বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে থাকা ফরেন এক্সচেঞ্চ অপারেশন বিভাগ ও ট্যারিফ কমিশনের দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, গত বছর আগাম বন্যায় হাওর ও উত্তরাঞ্চলের ফসল ডুবে যাওযায় খাদ্য ঘাটতিতে পড়ে দেশ। দাম বেড়ে যায় চালের। বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে খাদ্য আমদানির উপর শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। এরপর থেকে খাদ্য আমদানি বৃদ্ধি পায়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতবছর বন্যায় সাড়ে ১০ লাখ টন ধান নষ্ট হয়। কিন্তু আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের পর চাল আমদানি বৃদ্ধি পায় ৪৫ লাখ মেট্রিক টন। অতীতে বিভিন্ন বছরে চাল আমদানি হলেও তা কখনো ১১ লাখ মেট্রিক টন অতিক্রম করেনি। চাল আমদানিতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের চাল আমদানির সিদ্ধান্ত ছিল প্রলম্বিত। খাদ্য আমদানির বিলম্বিত এ সিদ্ধান্ত অপরিপক্ষ ছিল বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমনান। তিনি বলেন, বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য আমদানি করলে তা আরও ফলপ্রসু হতো।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, গতবছর সঠিক সময়ে চাল আমদানি করতে পারলে কম চাল আমদানি করেন বাজারে দাম নি¤œমুখি রাখা যেত। ওই সময়ে সরকারের আপদকালিন মজুদও বাজারে ভূমিকা রাখতে পারেনি। এরপর এই বিপুল পরিমান চাল আমদানি করতে হয়েছে। এবার বোরো ধানের ফলনও ভাল হয়েছে। তিনি বলেন, চালের দাম আরও কিছুটা কমার পর সরকারের উচিত হবে চাল আমদানিতে আবারও ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা।