তিন মাসে খেলাপি ঋণ বাড়লো ১৪ হাজার কোটি টাকা
জাফর আহমদ : ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ গত তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এ সময়ে ৬ রাষ্টায়ত্ত ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খেলাপিঋণ বেড়েছে। এতে ব্যাংকিং খাতের সার্বিক খেলাপি ঋণ ফের দুই অঙ্কের ঘর অতিক্রম করেছে। সবমিলে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এ খাতে মোট খেলাপিঋণ দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। মার্চ পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য অনুযায়ী, তিন মাস আগে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ খাতে খেলাপিঋণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ এদিকে, মার্চ পর্যন্ত মোট খেলাপিঋণের মধ্যে মন্দমানে পরিনত হয়েছে ৭৩ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। এ মানের খেলাপিঋণ আদায়ের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীন।
জানা যায়, গত বছরের শেষ দিকে বিপুল অঙ্কের ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত ও আদায় জোরদায় করায় খেলাপিঋণ এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসে। কিন্তু চলতি বছরে খেলাপিঋণ আবার লাগামহীনভাবে বাড়তে শুরু করেছে। এর কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিস্টরা বলছেন, ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলো তাদের অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাই সেখানে ভালো অবস্থান দেখাতেই বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে থাকে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে অন্যতম হলো-খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল বা নবায়ন করা। আর বছরের শেষ সময়ে এসে এই সুবিধা দেয়া-নেয়ার প্রবণতাও বাড়ে। এছাড়া শেষ সময়ে ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার করা হয়। কিন্তু বছরের শুরুতেই ঋণ পুনঃতফসিল যেমন কম হয়, তেমনি আদায় কার্যত্রমেও সেরকম গতি থাকে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করেছে ৮ লাখ ২২ হাজার ১৩৭ কোটি ৪৪
লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বা ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। তিস মাস আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে খেলাপিঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত তিন মাসে সবচেয়ে বেশি খেলাপিঋণ বেড়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে। এর পরিমাণ ৭ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। এরপরেই রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব খাতের ব্যাংকগুলো। এ খাতের ছয় ব্যাংকে খেলাপিঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৩৫৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। বিদেশী নয় ব্যাংকের বেড়েছে ৩৪ কোটি টাকা। তবে গত তিন মাসে বিশেষায়িত দুই ব্যাংকে নতুন করে খেলাপিঋণ বাড়েনি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত রাষ্টৃায়ত্ত ছয় ব্যাংকের ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকার বিতরণের বিপরীতে খেলাপি হয়ে পড়েছে ৪৩ হাজার ৬৮৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তিন মাস আগে এই ছয়টি ব্যাংকের খেলাপিঋণ ছিল ৩৭ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা বা ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। ২০১৮ সালের মার্চ শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ২১ হাজার ২৯০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ৩৭ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ৬ শতাংশ। তিন মাস আগে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণ ছিল ২৯ হাজার ৩৯৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। মার্চ শেষে বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ৩১ হাজার ২২৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ঋণের বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ২ হাজার ১৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ০১ শতাংশ।
তিন মাস আগে বিদেশিী ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণ ছিল ২ হাজার ১৫৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে, এ সময়ে সরকারি মালিকানার দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ১৯৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ৫ হাজার ৪২৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তিন মাস আগেও এই ব্যাংক দুটির একই পরিমাণ খেলাপিঋণ ছিল।