দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ
স্বপ্না চক্রবর্তী : দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে কাজ করছে সরকার। ২০৪১ সালে ৬৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্য নিয়ে হাতে নেয়া হয়েছে দ্বিতীয় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে তোলা হবে এই দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চর অঞ্চলের আটটি স্থানে সমীক্ষা করেছে বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশন। প্রকল্পটির পরিচালক ও বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম মিজানুর রহমান বলেন, আমরা সমীক্ষা করে ১৫টি জেলার সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেছি। এই অঞ্চলগুলোর অন্যান্য তথ্য যাচাই বাছাইয়ের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি দিয়েছি। তিনি বলেন, সরকার একটি অঞ্চলে ২ থেকে ৪টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চায়। এইসব এলাকায় আমাদের ২০০০ একর জমির প্রয়োজন। আমরা ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলা থেকে তথ্য পেয়েছি যার মধ্যে রয়েছে পটুয়াখালি, বরগুনা, বাগেরহাট, বরিশাল এবং নোয়াখালি। আমরা এই অঞ্চলগুলো নিয়ে কাজ করছি।
জানা যায়, উপকূল অঞ্চলগুলোর মধ্যে পটুয়াখালীর পক্ষিয়ার চর, বরগুনা জেলার খোট্টার চর, নিদ্রার চর, টেংগার চর, আলিসার মোড়, খুলনা জেলার চর হালিয়া, নোয়াখালীর বয়রা চর ও ফেনী জেলার মুহুরীর চর প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। এসব অঞ্চলের পাঁচ কিলোমিটারের ব্যাসার্ধের জনসংখ্যা, সিসমিক স্ট্যাবিলিটি, ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থান, বৈদ্যুতিক অবকাঠামো এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার তথ্য সংগ্রহ করতে ‘বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান নির্বাচনের সমীক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে আন্তর্জাাতিকভাবে প্রযোজ্য গাইড লাইন অনুসারে এবং জাতীয় পর্যায়ে আইনী ও কারিগরি বিষয়সমূহ অনুসরণ করে দেশে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে সাইট সার্ভে ও সাইট নির্বাচন করা হবে। জানা যায়, এই প্রকল্পেও রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত হওয়া অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। ড. এএসএম মিজানুর রহমান জানান, এই প্রকল্পটিও বিদেশি আর্থিক সহায়তায় হবে। এবং এই নতুন প্রজেক্টটির জন্য বিনিয়োগকারীও তৈরি রয়েছে।
পরমাণু শক্তি কমিশন সূত্রে জানা যায়, সম্ভাব্য এই আটটি অঞ্চল ছাড়াও আশেপাশের আরো কিছু অঞ্চলে জরিপ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সাইট নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে হাইড্রোজিওলজিক্যাল, সিসমোলজিক্যাল, জিওলজিক্যাল, জিওটেকটোনিক, বন্যা ও সুনামি, মেটেরোলজিক্যাল বিষয়গুলো ছাড়াও পরিবেশ দূষণ, মানব সৃষ্ট বিভিন্ন ঘটনার বিষয়ে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করার লক্ষ্য রয়েছে।
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুত উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে ৬৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যু উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যার ৭০ ভাগ কয়লা ও গ্যাসের মাধ্যমে উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। বাকি ৩০ ভাগ বিদ্যুৎ পারমাণবিক শক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও আমদানির মাধ্যমে মেটানোর লক্ষ্য রয়েছে। এ অনুযায়ী ২০২৪-২৫ সাল নাগাদ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুইটি ইউনিটের মাধ্যমে ১৩শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। অন্যদিকে ২০৪১ সালের মধ্যে দুই ধাপে আরো চারটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট করার পরিকল্পনা রয়েছে।