গরিব ছাড়া সবাইকে খুশি করার বাজেট ২০১৮-১৯
বিশ্বজিৎ দত্ত : গরিব ছাড়া সবাইকে খুুশি করার ২০১৮-১৯ সালের বাজেট প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। বলা হচ্ছে আগামী বাজেটটি হবে ভোটারবান্ধব। এ জন্য ব্যক্তিগত করসীমা বৃদ্ধির কর্পোরেট কর কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে বেশিসংখ্যক মানুষ যাতে করের আওতায় আসে তার জন্য পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এটি করা হচ্ছে মূলত পরোক্ষ কর বিশেষ করে ভ্যাটের ওপর জোর দিয়ে। আগামী বাজেটের সম্ভাব্য আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
জানা গেছে, ব্যবসায়িদের স্বস্তি দিতে কর্পোরেট কর ১ থেকে শতাংশ কমানো হতে পারে। ভ্যাটের হারে কিছুটা পরিবর্তন করা হবে। সেটি চলতি বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছিল ১৫ শতাংশ। কিন্তু এবারে তা কমিয়ে ১২ শতাংশ করা হতে পারে। তবে নতুন অনেকগুলো ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপ করা হতে পারে। চলতি বাজেটে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি। এবারে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য কিছু পদক্ষেপ থাকবে। এটি করা হবে কর ছাড় ও প্রণোদনা বৃদ্ধির মাধ্যমে। আমদানি ক্ষেত্রেও শুল্ক ছাড় হতে পারে। উল্লেখ্য, কয়েক বছরে সরকার, এমপি-মন্ত্রী ও আমলাদের বেতন কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছে। তাদের সুবিধা, হাত খরচ, গাড়ি ও বাড়ির জন্যও অর্থ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু গার্মেন্টস শ্রমিক বা অন্যান্য ক্ষেত্রে নিয়োজিত শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়নি। সংসদ সদস্যদের বেতন ২৭ হাজার থেকে ৫৭ হাজার। আমলাদের বেতন ৬০ হাজার থেকে ১ লাখের ওপরে করা হয়েছে। বাজারদরের সঙ্গে হিসেব করে মাইনে ডাবল করার জন্য আমলারা এবারের দাবি করছেন। এমপিরা বলছেন আমলাদের চেয়ে তাদের বেতন ১ টাকা হলেও বৃদ্ধি করতে হবে। এমপি ও আমলারা ৭৫ হাজার টাকার মোবাইলসেটও পেয়েছেন। কিন্তু শ্রমিকদের মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করা হয়নি। পোশাক রপ্তানিকারক ২৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি সবচেয়ে কম। গবেষণা সংস্থা সিপিডি দেখিয়েছে বাজেটে যেসব বিষয়গুলো গরিবের সুবিধায় লাগে সেই সামাজিক সুরক্ষায় গত কয়েক বছর যাবত বাজেট বরাদ্দ কমে গেছে। তাদের হিসাবে সামাজিক সুরক্ষা থেকে যদি পেনশনের অর্থ আলাদা করা হয়, তবে গরিবদের জন্য আসলে বরাদ্দ কমেছে জিডিপির ১ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে সামাজিক সুরক্ষায় টাকার অংক কিছুটা বাড়লেও মূল্যস্ফীতি ও টাকার অবমূল্যায়নে এবারের সামাজিক সুরক্ষায় এই বরাদ্দও কমই থাকবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে বরাদ্দ গত বছর ছিল জিডিপির ২ দশমিক ৩২ শতাংশ ও ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। এই বরাদ্দও সম্পূর্ণ ব্যয় হয়নি। শিক্ষায় ব্যয় হয়েছে মোট বরাদ্দের চেয়ে দশমিক ১০ শতাংশ কম। স্বাস্থ্যে খরচ হয়েছে দশমিক ১০ শতাংশ। আগামী বজেটের এ দুটিতে বরাদ্দ তুলনামূলকভাবে একই থাকবে। রাজস্ব আদায় : আগামী অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হবে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৮ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। রাজস্ব আদায়ের যে টার্গেট তা আদায় হবে নতুন কোনো করারোপ ছাড়াই। করের আওতা বাড়িয়ে এ টার্গেট পূরণ হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে। এনবিআরকে আগামী অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেয়া হচ্ছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৮১২ কোটি টাকা। এনবিআর-বহির্ভূত খাত থেকে আগামী অর্থবছরে রাজস্বপ্রাপ্তি ধরা হচ্ছে ১১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে আট হাজার ৬২২ কোটি টাকা। আর কর-ব্যতীত প্রাপ্তি প্রাক্কলিত হচ্ছে ৩৩ হাজার ১১২ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে ৩১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে জিডিপি হবে ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এ অঙ্কে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো করতে হবে। কারণ বিনিয়োগ না বাড়লে প্রবৃদ্ধি বাড়ানো সম্ভব হবে না।
বাজেট ঘাটতি : আগামী অর্থবছরের বাজেটে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে ঘাটতির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে তার পরিমাণ ১ লাখ ২৭ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৩ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা ধার করবে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা এবং অন্য খাতে এক হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে বাজেটের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। নির্বাচনি বাজেট বলে কিছু নেই। আমার কথা হলো, এটা শেষ বাজেট। তাই এখানে ইনোভেটিভ কিছু থাকবে না। যা করছি সেটা কন্টিনিউ করা হবে। আর যেহেতু আমরা আশা করি যে, আমরা নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবার ক্ষমতায় আসব। তাই আমরা চাই, যা আমরা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছি, সে ধরনের বাজেটই দেওয়া হবে।