নওগাঁর টুপি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে
আশরাফুল নয়ন, নওগাঁ: নওগাঁর নকশা করা টুপি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে। দেশে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। আর এসব টুপি তৈরি করছেন গ্রামীণ নারীরা। টুপি তৈরির আয় থেকে অভাবের সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। ঈদকে সামনে রেখে নওগাঁ সদর, রানীনগর, মান্দা ও মহাদেবপুরসহ ১১ উপজেলার গ্রামীণ নারীদের টুপি তৈরিতে ব্যস্ততা বেড়েছে। বিশেষ কায়দায় সেলাই ও ভাঁজ করে এই কাপড় দিয়ে বানানো হচ্ছে টুপি। সবার হাতে সুই-সুতা ও কাপড়। সুইয়ের ফোঁড়ে নান্দনিক নকশা ফুটে উঠছে একেকটা কাপড়ে। জানা গেছে, জেলার ১১টি উপজেলায় ১২০টি গ্রামের বিভিন্ন বয়সী প্রায় ৫০ হাজার নারী কারিগর এই বিশেষ ধরনের টুপি তৈরির কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তবে নওগাঁ সদর উপজেলার খাস-নওগাঁ,আরজিনওগাঁ,বনানীপাড়া,চকরামচন্দ্র,দুবলহাটি,মহাদেবপুর উপজেলার খোসালপুর, কুঞ্জবন,
খাজুর, রনাইল ও ভালাইন,
সুলতানপুর,শিবগঞ্জ,তাতারপুর,মধুবন,হরমনগর,উত্তরগ্রাম,মান্দাউপজেলার,মৈনম,প্রসাদপুর,ফেরিঘাট,বলশিন,বানিশর,গোপালপুরইটাফোঁড় গ্রামের টুপি তৈরির কারিগর বেশি। আর ঈদকে সামনে রেখে তাদের বেড়েছে ব্যস্ততা। এসব কারিগরের কাছে নওগাঁ ও মহাদেবপুরের ব্যবসায়ীরা বিদেশী ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন নকশার ছাপ দেওয়া সাদা রংয়ের টুপির কাপড় ও সুতা কারিগরদের কাছে পৌঁছে দেন। এসব কাপড়ে সুই-সুতা দিয়ে সুন্দর সুন্দর নকশা ফুটিয়ে নারী কারিগররা। টুপিতে নকশা তৈরিতে সময় এবং শ্রমের ওপর ভিত্তি করে কারিগরদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। কোনো টুপিতে নকশা তুলতে ২০-২৫ টাকা আবার কোনো টুপিতে নকশা করতে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়। টুপিতে নকশা তৈরির কাজ একজন নারী কারিগরের মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় হয়। বেশির ভাগ বোতাম সেলাই ও চেইন সেলাই টুপি তৈরি করা হয়। সুই-সুতো দিয়ে নিপুণ হাতে প্রতিটি টুপি তৈরি করতে প্রকার ভেদে ৭-১৫ দিন সময় লাগে। টুপিতে নকশা তোলার কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক নারী। অভাবের সংসারে ফিরেছে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য। তবে এ কাজ করে স্বাবলম্বী হলেও সময়ের ন্যায্য মজুরি তারা পান না। আর এসব নকশা করা টুপি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের পাকিস্তান, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কুয়েত, কাতার, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। দেশে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা।
মহাদেবপুর উপজেলার মধুবন গ্রামের গৃহবধূ সাজেদা খাতুন। টুপির প্রাথমিক কাজটি করেন তিনি। তিনি বলেন, এক থান কাপড় থেকে প্রকারভেদে ৯০-১০০টি টুপি তৈরি হয়। পলিথিনের কাগজে সোনামুখি সুই দিয়ে বিভিন্ন ফুলের ডিজাইন করা হয়। এরপর সাইজ করা টুপির কাপড়ে ডিজাইন পলিথিন রেখে তেল ও ব্লু (নীল রং) দিয়ে ছাপ দেয়া হয়। ছাপ দেয়া ফুলের উপর সিঙ্গার মেশিন দিয়ে সেলাই করা হয়। এ কাজটি করতে ১-২ দিন সময় লাগে। যার মজুরি পান ৭০০ টাকা। এরপর এ টুপিটি বিভিন্ন কারিগরের কাছে হাতের কাজ করতে দেয়া হয়।
সদর উপজেলার চকরামচন্দ্র গ্রামের দশম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আকতার বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি টুপি তৈরির কাজ করে মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা আয় হয়। এই আয় স্কুলের যাওয়া-আসা,প্রাইভেট পড়ার খরচ, প্রয়োজনীয় কসমেটিক খরচসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় করা হয় এবং পরিবারেও দেয়া হয়।
কাপড় ও নকশাভেদে এসব টুপি ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়। সারা বছরই আমরা কারিগরদের টুপির অর্ডার দিয়ে থাকি। তবে রমজান ও ঈদ উপলক্ষে টুপির চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি টুপি রপ্তানি হয়।