সংকট আর আতংকে আম বাগানী ও ব্যবসায়ীরা
মতিনুজ্জামান মিটু: গাছ থেকে পাড়া এবং বিপননের দূরাবস্থার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের আম চাষি, বাগানি ও ব্যবসায়িরা। সাতক্ষীরা, খুলনা, খাগড়াছড়ি, যশোর, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, নাটোর ও রাজশাহী জেলার আম চাষিদের অবস্থা করুণ। লোভনীয় ফল হওয়ায় টান থাকলেও রোজা এবং ঈদের বাজারে আমের জায়গা অন্যান্য বারের মতো নেই। দেশের মধ্যের সবচেয়ে বড় মোকাম রাজধানী ঢাকার মানুষ এখন প্রধানত ব্যস্ত পোষাক পরিচ্ছদসহ অন্যান্য পণ্যের কেনাকাটা নিয়ে। ঈদের পর প্রায় সপ্তাহ জুড়ে ঢাকা থাকবে প্রায় ফাঁকা। এসময় স্থানীয় বাজার ছাড়া আম বেচা কেনার জায়গা খুব একটা থাকবে না। গাছে আম পেকে পড়ে পঁচে যাওয়ার ভয়ে দিশেহারা আম চাষিদের ঈদের আনন্দ ম্লান প্রায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্বীকৃত আম চাষি চুয়াডাঙ্গার আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাস্তবসম্মত অভিজ্ঞতার অভাবে গাছ থেকে আম পাড়ার ক্ষেত্রে নেয়া অবিবেচনা ও অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত চাষিদের মরণ ফাঁদে ফেলেছে। এই মরণ ফাঁদ থেকে উঠার কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। গত ৭ জুন থেকে চুয়াডাঙ্গাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে আ¤্রপালি আম
পাকা শুরু হয়েছে। কিন্তু বাস্তব বিবর্জিত সিদ্ধান্তের বেড়াজালে বন্দি কৃষি কর্মকর্তারা ১৮ জুন থেকে ২২ জুনের আগে গাছ থেকে আ¤্রপালি পাড়ার অনুমতি দিচ্ছেন না। আবেদন- নিবেদন ও দেন দরবার করেও লাভ হচ্ছে না।
এদিকে গাছে আম পেকে মাটিতে পড়ে পঁচে যাচ্ছে। দিশেহারা চাষিরা গোপনে গাছ থেকে আ¤্রপালিসহ অন্যান্য আম পেড়ে হাটে হাটে পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। নিষেধাজ্ঞার কারণে আড়তে তুলতে পারছেন না এবং ঢাকাও পাঠাতে পারছেন না। এবার হিমসাগর মণ প্রতি ৮০০ এবং ল্যাংড়া আম ৭০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে গাছ থেকে আম পাড়ার মুজুরি, আড়তে নিয়ে যাওয়ার পরিবহন, আড়তের কমিশন ও আড়ত থেকে ক্রেট ফেরত আনার খরচ বাদ দিয়ে কৃষক মনপ্রতি হিমসাগরে ৬০০ টাকা এবং ল্যাংড়ায় ৫০০ টাকা পাচ্ছে। আ¤্রপালি হাটে হাটে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। এবার লেবার খরচও বেশি। একবেলা লেবার প্রতি মজুরি দিতে হচ্ছে ২৫০ টাকা। টানা বৃষ্টির পর আম তাড়াতাড়ি পাকে। এই অঞ্চলের চেয়ে চাঁপাই নবাবগঞ্জে আম ১৫ থেকে ২০ দিন পরে পাকে। আম পাড়ার ভুল সিদ্ধান্তে কৃষকের আম বিক্রিতে ভোগান্তি এবং ক্ষতি দুই বেড়েছে।
এ বিষয়ে নাটোরের পুরস্কারপ্রাপ্ত ফল চাষি সেলিম রেজা বলেন, এই মৌসুমে সব জাতের আমের ফলন বেশ ভাল, কিন্তু বাজার মূল্য না থাকায় আমরা চাষীরা হতাশ। রোজা ও আমের প্রতি মানুষের মধ্যে ভয়ের কারণে আম নিয়ে বিপাকে পড়েছে চাষিরা। আশা করছি লেট ভ্যারাইটি (দেরিতে পাকে এমন জাতের আম) বারি ৪, গৌরমতি, নিলুদ্দিন, ফজলি ও আ¤্রপালির দাম ঈদ পরবর্তিতে বাড়বে। নইলে ব্যাগিং তথা অর্গানিক আম উৎপাদনে চাষীরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে।