বাজেটের পেশের পর চালের বাজারে দাম আতঙ্ক
জাফর আহমদ: সংসদে বাজেট উপস্থাপনের পর চালের বাজারে দাম আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে চালের আড়ৎদাররা। রাজধানীর চাল বিক্রেতাদের বক্তব্য, সংসদে বাজেট পাশ হয়েছে, চালের দাম বাড়বে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর বাজারে দেখা যায়, মোটা চাল ৪৪ থেকে বাজার ভেদে ৪৭ টাকা পর্যন্ত। বিআর-২৮ চালের কেজি ৫০ থেকে বাজার ভেদে ৫৪ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি চিকন চাল (মিনিকেট) বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে বাজার ও চালের ধরন ভেদে ৬৪ টাকা পর্যন্ত। গত কয়েকমাস ধরে একই দামে বিক্রি হচ্ছে এ চাল।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চালের বর্তমান দাম আর বেশি দিন থাকবে না বলে বাজারে গুজব চড়িয়ে পড়েছে। রাজধানীর রাজাবাজারের ইনতাজ আলী বলেন, এখন চালের দাম ঠিকই আছে, কোন কম-বেশি নেই। কয়েকদিন পর বাড়বে। কেন বাড়বে-এমন প্রশ্নের জবাবে ইনতাজ আলী বলেন, সংসদে চালের দাম বৃদ্ধির কথা পাশ করেছে। তাছাড়া চালের দাম বাড়বে বলে জানিয়েছেন আড়ৎদাররা। একই কথা জানান মিরপুরের খুচরা চাল বিক্রেতা নুরুল ইসলাম। বাদামতলির পাইকারি চাল বিক্রেতারা আসগর আলী বলেন, এখন তো চালের ঠিকই আছে। আমদানি ব্যয় বাড়লে ব্যবসায়ীরা লোকশান দিয়ে কম দামে চাল বিক্রি করবে?
২০১৭ সালে আগাম বন্যায় হাওর ও উত্তরাঞ্চলের ধান ডুবে যাওয়ার পর বাজারে চালের দাম বেড়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার চাল আমদানিতে শুল্ক তুলে নেয়। এতে চাল দাম বেড়ে যায়। কিন্তু বাজারে চালের দামে কার্যকর প্রভাব ফেলতে পারেনি। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১০ মাসে চাল আমদানি হয়েছে ৪৫ লাখ মেট্রিক টন। চিকন, মোটা নির্বিশেষে প্রতি কেজি এ চাল আমদানি ব্যয় হচ্ছে ৩৩ টাকা। কিন্তু বাজারে প্রতি কেজি এ চাল গড়ে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
কৃষক নেতারা জানায়, ব্যবসায়ীদের হাতে চাল থাকার কারণে কৃষকরা ধান বিক্রি করে টাকা খরচ তুলতে পারছে না। এ সময় বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষিতে চাল আমদানিতে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ফলে চাল আমদানি করে ব্যবসায়ীরা যে অতি মুনাফা করছিল তা কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় চালের দাম বৃদ্ধির গুজব ছড়ানো হয়।
চালের আমদানিকারকদের একটি সূত্র জানায়, চাল আমদানি বাড়লেও তা মূলধারার চাল ব্যবসায়ীরা সব চাল আমদানি করেনি। চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের পর মৌসুমি আমদানিকারক ও মজুদদার শ্রেণির আমদানিকারকদের উদ্ভব হয়েছে। চালের দাম বৃদ্ধির গুজবের পেছনে বাজার ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি মৌসুমি এ সব ব্যবসায়ীদেরপ্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে দিক-নির্দেশনা নেই: টিআইবি
জাফর আহমদ: প্রস্তাবিত বাজেটে আয় বৃদ্ধিতে বর্ধিত করের প্রভাব এবং অনিয়মে জর্জরিত ব্যাংকিং খাত সংস্কারে প্রতিশ্রুতি নেই বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে সংস্থাটি। গতকাল পত্রিকা অফিসে পাঠানো সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগের কথা জানান।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় সুবিধাবঞ্চিতদের সংখ্যা ও মাসিক ভাতার হার বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের নারী উন্নয়নে সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রদানের বিষয়টি ইতিবাচক। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত লোকশানি খাতের ঘাটতি পূরণে জনগণের করের টাকায় ভর্তুকি অব্যাহত রাখা ও বিশেষ কৌশলে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার তীব্র নিন্দা জানাই। বাজেটে প্রত্যাশিত স্বচ্ছতার ঘাটতি উল্লেখ করে প্রস্তাবিত উন্নয়ন পরিকল্পনার সঠিক তদারকি ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নে নজরদারি বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট কৌশলগত পরিকল্পনা ও দিক-নির্দেশনা প্রদানের দাবি জানায় সংস্থাটি।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় প্রদত্ত এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী বলেন, অনিয়ম, দুর্নীতি ও যোগসাজসের ফলে ধুঁকতে থাকা ব্যাংক খাত সংস্কারে বাজেট প্রস্তাবনায় কোন উদ্যোগ না থাকা, আমানতকারীদের আস্থার সাথে সরকারের প্রতিশ্রুতি অন্যায্য ও বরখেলাপ। ব্যাংক ব্যবস্থায় খেলাপী ঋণ ও যোগসাজসের সাথে দুর্নীতিবাজ, বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার উদ্যোগ না নিয়ে বিদ্যমান করপোরেট কর হার কমানোর প্রস্তাব অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক।
উদ্বেগজনক মাত্রায় বাড়তে থাকা বেকার তরুণদের কর্মসংস্থান নিয়ে বাজেট প্রস্তাবনায় দিক-নির্দেশনামূলক কোন উদ্যোগ নেই এল উদ্বেগ প্রকাশ করে ড. জামান। তিনি বলেন, বাজেট প্রস্তাবনায় সরকারি আয় বৃদ্ধির জন্য নেয়া বেশিরভাগ মৌলিক চাহিদার উপর কর আরোপের ফলে আদতে মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষের উপর এর তীব্র প্রভাব পড়বে যা সার্বিকভাবে সমাজে আয়-বৈষম্য ও অসাম্য-বিভেদ বৃদ্ধিতেই ভূমিকা রাখবে।