৪ টাকায় মিলছে ইউনাইটেড এয়ারের মালিকানা!
ফয়সাল মেহেদী: ৪ টাকারও কমে মিলছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ লিমিটেডের মালিকানা। শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার বর্তমানে ৩.৯০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। শেয়ারবাজারের যে কোনো বিনিয়োগকারী চাইলেই এই টাকায় শেয়ার কিনে কোম্পানিটির ক্ষুদ্র্র মালিক হতে পারবেন। তবে যেনে রাখা ভালো- এক সময় লাভে থাকা ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের এই বিমান কোম্পানিটি এখন লোকসানে বিধ্বস্ত।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছরের মধ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের শেয়ার দর ৮ টাকার উপরে ওঠেনি। ১০ টাকার শেয়ার ৩.৯০ টাকায় নেমে এলেও মিলছে না ক্রেতা। চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এখন শুধু নামেই টিকে আছে। সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরে (৩০ জুন ২০১৭) প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হয়েছে ১৩৯ কোটি ১২ লাখ ৫ হাজার ৪৪৬ টাকা। এর বিপরীতে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১.৬৮ টাকা। এর আগের বছরের একই সময়ে লোকসান হয়েছিল ১৩৭ কোটি ৪৬ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৬ টাকা এবং শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ১.৬৬ টাকা। লোকসানের ধারাবাহিকতায় দুই বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ।
এদিকে চলতি অর্থবছরের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই- সেপ্টেম্বর’ ১৭) লোকসান দাঁড়িয়েছে ২৮ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ০.৩৪ টাকা।
ডিএসই সূত্রে আরও জানা গেছে, সম্প্রতি ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের দায়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ৭ পরিচালককে ১০ লাখ টাকা করে এবং খন্দকার তাসলিমা চৌধুরীকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
তথ্যমতে, ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ইউনাইটেড এয়ার। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধন ৮২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৭০ দশমিক ৪৩ শতাংশ বা ৫৮৪ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৩ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং উদ্যোক্তাদের ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। কিন্তু বিএসইসির নিয়ম অনুসারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া এককভাবে প্রত্যেক পরিচালকের ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
মূলত গত ৬ বছর ধরে আর্থিক সংকটে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১১ সালে রাইট শেয়ার ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করলেও আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। পরবর্তীতে আবারও রাইট শেয়ার ছেড়ে অর্থ তুলতে চেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু উদ্যোক্তাদের ৩০ শতাংশ শেয়ার না থাকায় অনুমতি দেয়নি বিএসইসি।
এদিকে বেশি দামে উড়োজাহাজ কেনার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছেও ইউনাইটেড এয়ারের শত কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে।