ইফতারিতে তালের শ্বাস
সেলিম আহমেদ, ঈশ্বরদী(পাবনা) : ঈশ্বরদী ও আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য তালগাছ। এ তালের অপরিপক্ক অবস্থায় ভেতরে থাকে সুস্বাদু পানিযুক্ত নরম একটি শ্বাস। তালের শ্বাস গ্রাম বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহি খাবার হিসেবে অনেক আগে থেকে দেশের সর্বত্র পরিচিতি। রোজার কারণে বর্তমানে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ক্রেতাদের কাছে। ইফতারের আগ মুহুর্তে অন্যন্য খাবার কেনার সময় ছোট-বড় সবাই তাল স্বাসের দোকানে ভিড় জমায়। ইফতারে তালের শ্বাস খেয়ে মানুষ তাদের আতœার শান্তি মিটায়। বিশেষ করে এই গরমের দিনে তালের শ্বাস খেয়ে মানুষ তাদের প্রাণ জুড়ায়। বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে তাল গাছে তাল ধরে। বর্তমানে গাছে তাল ধরেছে এবং ওই সব তালে শ্বাস হয়েছে। তাল গাছে শ্বাস হওয়া শুরু হয় মে-জুন মাসের দিকে। আর ঠিক তখনই গ্রাম-গঞ্জে তালের শ্বাস খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। অনেকে আবার গ্রাম অঞ্চলে গিয়ে ভ্যানে করে তাল কিনে এনে একটু বেশি মূল্যে শহরে বিক্রি করে থাকেন। নিজেদের সংসারের একটু উন্নতি এবং বাড়তি আয় হয়ে থাকে।
উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে ঈশ্বরদী শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে তালের শ্বাস বিক্রি করতে দেখা যায়। কয়েকজন তাল বিক্রেতার সাথে কথা বললে তারা জানায়, তালের শ্বাস গ্রাম-বাংলার একটি জনপ্রিয় ও সুস্বাদু খাবার। আমরা গ্রামে গিয়ে গাছ থেকে তাল পাইকারি দরে কিনে এনে বিভিন্ন হাটে বাজারে স্বাস খুচরা বিক্রি করে থাকি। তাল স্বাস বিক্রি করতে প্রচুর খাটুনি হয়। তাল স্বাস বিক্রিতে লাভ বেশ ভালোই হয়। তাল স্বাস বিক্রি করে লাভের টাকা দিয়ে সংসারের খরচ যোগানো যায়। অপরদিকে উপজেলার কয়েকজন বয়স্ক ব্যক্তি জানান, তাল আমাদের গ্রাম বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহি খাবার। এর শ্বাস খুবই সুস্বাধুকর একটি খাবার, আবার এই তাল পাকলে হরেক রকমের পিঠা-পুলি তৈরি করা হয়ে থাকে গ্রাম বাংলায়। বিশেষ করে যখন জামাই বাড়িতে আনা হয় তখন এই তালের পিঠা বানানোর ধুম পড়ে যায়। কিন্তু আবহমান কালের ডিজিটাল যুগে তালের গাছ গ্রাম থেকে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। আগে তাল গাছে বাবুই পাখির বাসা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ঝুলে থাকতো। তাল গাছ কেটে ফেলার পর সেখানে কেউ আর গাছ লাগচ্ছে না। তাল গাছ এখন বিলুপ্ত প্রায়।