কাজে আসছে না ‘কুশিয়ারা ডাইক’
আব্দুল মতিন, ওসমানীনগর (সিলেট) :সিলেটের ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ উপজেলায় ঈদের পূর্বে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করলে বাঁধের অন্তত ৩০টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। জনসাধারণকে বন্যার কবল থেকে রক্ষায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ‘কুশিয়ারা ডাইক’ নির্মাণ করা হলেও তা পুরোপুরি উপকারে আসছে না। প্রতিবছর বাঁধের কোথাও না কোথাও ভেঙে গিয়ে এবং নিচু বাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে বন্যার কবলে পড়ে চরম দুর্ভোগ ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। এতে মুহূর্তেই তলিয়ে যায় হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গত বছরেও এই বাঁধ ভেঙে তিনদফা ফসলের ক্ষতিসহ দীর্ঘ মেয়াদী বন্যার কবলে পড়েছিল এলাকার লাখ লাখ মানুষ। বাঁধটি পর্যাপ্ত উচ্চতা দিয়ে পরিকল্পিত ভাবে সংস্কারের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে অনাকাংখিত বন্যার কবল থেকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।
এদিকে গত দুদিনে কুশিয়ারা নদীর পানি হ্রাস পেলেও এলাকার জলপ্রবাহের পথ গুলো প্রায় অকার্যকর থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নতি নেই। নদীর ও লোকালয়ের পানি এখন সমানে সমান। এই বন্যায় দুই উপজেলার অন্তত ১০ ইউনিনের অসংখ্য ঘর-বাড়ি, অর্ধ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপজেলা হাসপাতাল, প্রশাসনিক কার্যালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও এলাকার অসংখ্য কাচা পাকা রাস্তাঘাট বন্যার জলে তলিয়ে গেছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় গত ১ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চরম দূর্ভোগে রয়েছেন। ভেঙে পড়েছে এলাকার সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকায় সরকারি ও বিভিন্ন ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ময়নুল হক চৌধুরী বলেন, কুশিয়ারা ডাইকটি টেকসই নয়। প্রতিবছরই বাঁধে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। সাদীপুর এলাকায় নদী ভাঙনের জন্য বিদ্যুৎ প্লান্টের অপরিকল্পিত ঝেটি স্থাপন ও অবৈধ বালু উত্তোলনকে দায়ি করেন তিনি। পর্যাপ্ত দৈঘ্য প্রস্থ ও উচ্চতা নিশ্চিত করে বাঁধটি সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদাল মিয়া বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি কমলেও ক্রমেই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। কুশিয়ারা ডাইক বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্মাণ করা হলেও পর্যাপ্ত উচ্চতা না থাকায় তা জনগণের উপকারে আসছে না। ডাইকটির উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান তিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর কালভার্ড বা ব্রিজ নির্মাণের অনুমতি না থাকলেও অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন স্থানে কালভার্ড নির্মাণ করা হয়েছে। এতে নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার সাথে সাথে এসব কালভার্ড ভেসে গিয়ে বাঁধের ভাঙন তরান্বিত করছে। নদী থেকে অপরিকল্পিত ভাবে বালি উত্তোলনকে বাঁধ ভাঙনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি বলেন, বাঁধটি পর্যাপ্ত উচ্চতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সংস্কার করতে পর্যাপ্ত ফান্ডের প্রয়োজন কিন্তু পর্যাপ্ত ফান্ড না থাকার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।