এমপিপুত্রের গাড়িচাপায় চালকের মৃত্যু, ৩০ লাখ টাকায় সমঝোতা!
আনিস রহমান: রাজধানীতে এমপিপুত্র সাবাব চৌধুরীর গাড়িচাপায় পথচারীর মৃত্যুর ঘটনা ৩০ লাখ টাকায় সমঝোতার প্রস্তাব উঠেছে বলে জানা গেছে। নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর পক্ষ থেকেই সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে নিহতদের পরিবারকে। নিহত সেলিম ব্যাপারী যে কোম্পানির হয়ে গাড়ি চালাতেন, সেই কোম্পানির মালিক পরিবারের পক্ষ থেকে ৩০ লাখ টাকার অঙ্কের প্রস্তাব দেন। এমপির পক্ষ থেকে অবশ্য কিছু টাকা কম দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সেলিম ব্যাপারীর কর্মস্থল নাওয়ার প্রোপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইমরান হোসেন এসব তথ্য জানান।
ইমরান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (২১ জুন) রাতেই এমপি সাহেব প্রথমে আমার সাথে ফোনে কথা বলেন। তখনই তিনি সমঝোতার প্রস্তাব দেন। এরপর কথা এগিয়ে নিতে তিনি ৪ জন লোক পাঠান আমার ডিওএইচএসের অফিসে (বাড়ি-৪৬৫, ফ্লোর-১, রোড-৮, বারিধারা)। সেখানেই তাদের সাথে কথা হয়। নিহতের পরিবারের বর্তমানে উপার্জনক্ষম কেউ নেই। তাই তারা যেন ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে পারে, সেজন্য ৩০ লাখ টাকার একটা ফিক্সড ডিপোজিট করে দিতে বলেছি। এই টাকা থাকলে প্রতিমাসে ২৫ হাজার টাকা আসবে। সেই টাকা দিয়ে তারা অন্তত চলতে পারবে।’
সমঝোতার ওই বৈঠকে সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী, তার স্ত্রী কামরুন্নাহার শিউলি, সন্তান সাবাব চৌধুরী বা পুলিশের পক্ষ থেকে কেউই উপস্থিত ছিলেন না। তবে নিহত সেলিম ব্যাপারীর স্ত্রী-সন্তানরা ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান জানান নাওয়ার প্রোপার্টিজের এমডি।
ইমরান হোসেন জানান, প্রায় দুই ঘণ্টা তার অফিসে সমঝোতা বৈঠক হয়। বৈঠক চলার সময়ও সংসদ সদস্য একরামুল করিমের সঙ্গে ফোনে কথা হয় তার। ইমরান বলছেন, “ওই সময় এমপি সাহেব বলেন, ‘আমার প্রতি আপনারা বিশ্বাস রাখেন, ওই পরিবারের প্রতি সুদৃষ্টি দেওয়া হবে। শুধু এই টাকাই নয়, ভবিষ্যতে তাদের আরো দেখভাল করা হবে।’ পরে দুয়েকদিনের দিনের মধ্যেই সংসদ সদস্যের লোকেরা আবার বসবেন বলে তারা চলে যান।”
এমপিপুত্র সাবাবই যে গাড়ি চালিয়েছিলেন, তা কি একরামুল করিম স্বীকার করেছেনÑ জানতে চাইলে ইমরান হোসেন বলেন, ‘তারা তো মেনে নিয়েই সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছেন। কে গাড়ি চালাচ্ছিল, সে কথা সরাসরি না বললেও তার গাড়ি চাপাতেই যে সেলিম নিহত হয়েছেনÑ সেটি এমপি সাহেবও বারবার বলেছেন।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়ে গেলে আইনি প্রক্রিয়াটা কী হবে, জানতে চাইলে ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, ‘সেটি আদালতের বিষয়। সমঝোতা হয়ে গেলে সেই কাগজপত্রসহ মামলা আদালতে পাঠানো হবে। আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটি সবাইকে মানতে হবে।’ সম্পাদনা: আনিস রহমান