জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিনারে বক্তারা নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে সবদলের সমান সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে
তরিকুল ইসলাম: বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার স্বার্থে আগামী নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে সকল দলের জন্য প্রয়োজনীয় নূন্যতম সমান সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। আর এই কাজ বাহির থেকে এসে কেউ করে দিতে পারবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকেই আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য ঐকমত্যে পৌঁছুতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দক্ষিণ এশীয় রাজনীতি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞরা। আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে দেশটির গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ দীর্ঘমেয়াদে বাঁধাগ্রস্থ হতে পারে বলে মন্তব্য করে একই সঙ্গে তারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় দুপুরে জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোপলি লাউঞ্জ হলে ‘দ্যা গ্লোবাল ডিক্লাইন অফ ডেমোক্রেসি: এ বাংলাদেশ পার্সপেক্টিভ’ বিষয়ক সেমিনারে এমন মতামত ব্যক্ত করেন তারা। নিউইয়র্কভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান ‘আর্চার কে ব্লাড সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি’ আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ডেমোক্রেসী কনফারেন্স-২০১৮’ উপলক্ষে ঐ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গ্লোবাল ক্রিমিনাল জাস্টিস বিষয়ক প্রাক্তন অ্যাম্বাসাডর স্টিফেন জে র্যাপ, প্রখ্যাত থিংকট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলের সাউথ এশিয়া সেন্টারের পরিচালক ডঃ ভারত গোপালস্বামী, প্রভাবশালী থিঙ্কট্যাঙ্ক উড্রো উইলসন সেন্টারের সিনিয়র এসোসিয়েটস ও সাউথ এশিয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর মাইকেল কুগেলম্যান, বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ের ইন্ডিপেন্ডেন্ট এক্সপার্ট ও বাংলাদেশের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা বিভাগীয় প্রধান হিদার গোল্ডস্মিথ। সেমিনার সঞ্চালনা করেন জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ফেলো ও বিশ্ব ব্যাংকের কনসালটেন্ট ডঃ তামিনা এম. চৌধুরী।
স্টিফেন জে র্যাপ তাঁর বক্তৃতায় বলেন, শুধু নির্বাচনই একমাত্র গণতান্ত্রিক মানদন্ড নয়। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী কিনা এগুলো নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ কাজ করছে কিনা সেটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটর্নি হিদার গোল্ডস্মিথ বলেন, একটি দেশ গণতান্ত্রিক কিনা দেখতে হলে সেখানে সরকারের জবাবদিহিতা আছে কিনা দেখতে হবে। আর এ সময়ের বাংলাদেশের জন্য এটি আরও বেশী জরুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মুক্তভাবে মতামত প্রকাশ করলে সাংবাদিকদের শুধু প্রতিষ্ঠান বন্ধ নয়, জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। বাধ্য হয়ে সাংবাদিকরা সেলফ-সেন্সরশিপ করছেন।
মাইকেল কুগ্যালম্যান বলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া দেশটির রাজনৈতিক স্বার্থেই খুবই গুরুত্বপূণ প্রথমত, যদি প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে না আসে তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি এমন ধারনাই বেশি যৌক্তিকতা পাবে। বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ আছে কি না-এ বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক ক্ষেত্রে সরকার রাজনৈতিক নিপীড়ন শুরু করে। এতে মানুষের মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব পড়ে। স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করতে না পেরে অনেকে চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
আটলান্টিক কাউন্সিলের সাউথ এশিয়া সেন্টারের পরিচালক ডঃ ভারত গোপালস্বামী বলেন, একটি অবাধ নির্বাচনের জন্য ভয়হীন, মুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন। ইকোনমিস্ট-এর গবেষণা অনুসারে, বাংলাদেশের সরকার গণতান্ত্রিক নয়, বরং একটি হাইব্রিড রেজিম। তিনি বলেন, ঢাকার উপর ওয়াশিংটনের চেয়ে দিল্লির প্রভাব বেশি। তাই, আঞ্চলিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নয়াদিল্লিরও ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। তার মতে, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, মৌলিক অধিকার এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ – এই তিন পর্যায়ে সংকট সৃষ্টি হলে সংবিধান বহির্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হয়।