কুষ্টিয়ার চরে সনাতন পদ্ধতিতে পশুপালন কাঙ্খিত মুনাফা বঞ্চিত শতাধিক খামারি
জাফর আহমদ, কুষ্টিয়া থেকে ফিরে: আধুনিক পশুপালন রীতির অভাবে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর, রাজশাহী জেলার বাঘা ও নাটোর জেলার লালপুর উপজেলায় পদ্মার চরে দুই শতাধিক ভ্রাম্যমান গরুর খামার (পাল) থেকে কাঙ্খিত ফল পাচ্ছে না খামারিরা। বিভিন্ন ধরনের রোগ-শোক, ক্ষরা ও বৃষ্টির মধ্যে এসব গরু বেড়ে উঠছে। এসব খামার থেকে যে হারে মুনাফা আসার কথা সে হারে আসছেনা। ফলে এসব খামার থেকে দেশে পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও অর্থনীতিতে যে সম্পদ যোগ হওয়ার কথা ছিল তা হচ্ছে না।
এ বিষয়য়ে দৌলতপুর উপজেলার পশুপালন কর্মকর্তা কাজী নজরুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, চরের এসব পশুপালন হয়ে থাকে সনাতন পদ্ধতিতে। বাপ-দাদার আমলে যেভাবে গরু পালন হয়েছে তারা তার বাইরে যেতে চায়না। পশুপালনে আধুনিক রীতি অনুসরণ করতে চায়না। তাদের এ ব্যাপারে পরামর্শ দিলেও তা নিতে আগ্রহ দেখায়না। তবে উপজেলা অফিসের কর্মী স্বল্পোতার কারণে পুরো এলাকায় সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না বলে জানান এই কর্মকর্তা।
সরেজমিনে এসব চরে দেখা যায়, এক একটি পালে ১০ থেকে ৫০টি করে গরু, ভেড়া ও মহিষ রয়েছে। এ সব পালের ধরন ভেদে এক থেকে দুজন রাখাল রয়েছে। একাধিক গরুর পাল একসাথে, কোথাও কোথাও একটি গরুর পাল ভিন্ন করে চরের বিভিন্ন তৃণভূমিতে চরানো হচ্ছে। সন্ধ্যার শেষে এসব গরু এক একটি স্থানে (বাথানে) বেঁধে রাখা হয়। তাৎক্ষনিকভাবে এসব পশুর পানি খাওয়ার প্রয়োজন হলে তার ব্যবস্থা নেই। বাধান থেকে অর্ধ কিলোমিটার থেকে এক কিলোমিটার দূরে পানি খাওয়ানোর ব্যবস্থা আছে।
রাতে বাথানের সকল পশু রাখা হয় খোলা আকাশের নিচে। বৃষ্টি ও ঝড়ের মধ্যেও খোলা আকাশের নিচে থাকে। গরুর রাখালরা থাকে নামেমাত্র ছোট্ট ছাউনিতে। অসুখ-বিসুখ হলেও খোলা আকাশের নিচে থাকে এসব পশু। রোগাক্রান্ত এসব পশুর বিশ্রামের ব্যবস্থা নেই। পরের দিন পালের গরুর সাথে তৃণভুমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে ছোয়াছে রোগ যেমন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আবার রুগ্ন গরুটি আরও রুগ্ন হয়ে পড়ে। বাচ্চা গরু, বাচ্চা সম্ভাব্য ও দুগ্ধবতী গরুগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ বিষয়ে কথা হয় দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগরের ভ্রাম্যমান খামারি মোয়াজ্জেম মালিথার সাথে। মোয়াজ্জেম মালিথার পালে গরু ও ভেড়া মিলে ৩২টি পশু রয়েছে। তার চারটি গরুর ক্ষুরা রোগ হয়েছে। দুটি গরু খেতে পারেনা, দুটি গরু সামান্য করে খায়; চারটি গরু বেশিক্ষন দাঁড়িয়েও থাকতে পারে না। তারপরও পালের অন্য পশুর সাথে এসব গরু চরে তৃণভূমি জুড়ে চরিয়ে নিয়ে বেড়ানো হয়।
সরকারের পশুপালন অফিসের কোন সহযোগিতা পায় কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে অপর খামারি আ. রহিম জানান, চরে গরুর চিকিৎসা বা খোঁজ খবর নেওয়ার কেউ নেই। তবে মাঝে মাঝে গ্রামে (নদীর পাড়ের উপরে) এসে খবর দেয় কেউ ইচ্ছা করলে সেখানে গরু নিয়ে যায়। কিন্তু গরু নিয়ে যাওয়া ব্যয় বহুল হওয়ার কারণে সেখানে নিয়ে যায়না। কদিন পর এমনিতেই ভাল হয়ে যায়। তবে যে গরু একবার রোগা হয় তা আর অন্য গরুর মত হয় না।