প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ঝিনুক চাষ
আদম মালেক: মানুষ ও জলজ পরিবেশ উভয়ের জন্য ঝিনুক খুব প্রয়োজনীয়। ঝিনুক উৎপাদনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে তাদের জীবন-জীবিকার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় কক্সবাজারের সামুদ্রিক উপকূলে বাণিজ্যিকভাবে লোানাপানির ঝিনুক চাষের সম্ভাবনা নিয়ে দেশে গবেষণা শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে সম্প্রতি সংশ্লিষ্টদের তিন দিনের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। জানা যায়, সামুদ্রিক ঝিনুক একটি দামী সি-ফুড হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং অনেক দেশে এর ওপর ভিত্তি করে খামারও গড়ে উঠেছে। ১৯৯০-এর দশকে প্রতিবেশী ভারতে সামুদ্রিক ঝিনুকের বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ এখনও গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে। ঝিনুকের খোলস থেকে চুন, অলঙ্কার, গৃহ সাজসজ্জার উপকরণ তৈরি, পোল্ট্রি ও ফিশ ফিড মিলে ক্যালসিয়ামের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ঝিনুকের মাংসল অংশ চিংড়ি, মাছ ও হাঁস-মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহ্নত হয়। বিশ্বের অনেক দেশে ঝিনুকের মাংসল অংশ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে ব্যবহ্নত হয়। বাংলাদেশে সাধারণত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ঝিনুকের মাংস খেয়ে থাকে। জলাশয় থেকে শৈবাল, জৈব পদার্থ এবং দ্রবীভূত ক্ষতিকারক উপাদান যেমন ভারী ধাতু দূরীকরণে ঝিনুকের ভূমিকা রয়েছে।
কক্সবাজার, মহেশখালী, সোনাদিয়া, মাতারবাড়ি, কুতুবদিয়া, উখিয়া, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, শাহপরীর দ্বীপসহ প্রায় সমগ্র সমুদ্র উপকূলে ঝিনুক পাওয়া যায়। যুগ যুগ ধরে উপকূলীয় জনসাধারণ এসব এলাকা থেকে শামুক-ঝিনুক সংগ্রহ করে আসছে। ২০০৫-০৬ সালে চালানো সর্বশেষ জরিপে কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী মোহনা, মহেশখালী, সোনাদিয়া ও ঘটিভাঙায় প্রাকৃতিকভাবে মুক্তা উৎপাদনকারী ৫ প্রকারের ঝিনুকের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে করতাল নামক এক প্রকার ঝিনুকে মুক্তার সন্ধানও পান তারা। পানির ১ মিটার হতে ২ মিটার গভীরতায় বালুকাময় তলদেশে ও ১৮ হতে ২২ পিপিটি লবণাক্ততায় একটি ঝিনুক বা করতালে গড়ে ৫টি হতে সর্বোচ্চ ১২টি মুক্তা জরিপে পাওয়া গেছে। তবে পরিবেশ দূষণ, আবাসস্থলের পরিবর্তন, নির্বিচারে ঝিনুক আহরণ ইত্যাদি নানাবিধ কারণে বর্তমানে প্রাকৃতিক উৎস থেকে ঝিনুক ও মুক্তার প্রাপ্যতা অনেকাংশে কমে গেছে। আর এ কারণে বাণিজ্যিকভাবে ঝিনুক চাষের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে ঝিনুক সংগ্রহের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি না করে ঘেরে চাষের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে ঝিনুক চাষ। সম্পাদনা: আনিস রহমান