‘কষ্ট করছেন কৃষক, অথচ কোনো অবদান ছাড়াই কেষ্ট মিলছে ফড়িয়াদের’
আশিক রহমান: কৃষি পণ্যের উৎপাদক কৃষকদের শ্রম ও উৎপাদনের ন্যায্য মূল্য দেওয়া হয় না বলে মনে করেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে আলাপকারে তিনি বলেন, একজন কৃষক জমিতে ফসল ফলান। অনেক শ্রম ও ঘাম ঝরে তার। চূড়ান্ত ফল মিলে ফসল প্রাপ্তিতে। সেটা ভিন্ন ভিন্ন ফসল হতে পারে। যেমন ধান-পাট-আলু-গম, শাক-সবজি ইত্যাদি। প্রশ্ন হচ্ছে, কৃষক যে ফসল ফলাচ্ছেন আমরা কি তার ন্যায্য মূল্য দিচ্ছি? দিচ্ছি না। কিন্তু মাঝখানে ফড়িয়ারা কৃষকের ফসলের কম মূল্য দিয়ে শহরে বেশি দামে বিক্রি করছে। এমনটি চলতে থাকলে আমাদের উন্নয়ন টেকসই হবে? হবে না।
তিনি আরও বলেন, কষ্ট করছেন আমাদের কৃষকেরা, কেষ্ট মিলছে ফড়িয়াদের। সেটা আবার কোনো বিনিয়োগ, অবদান ও কষ্ট ছাড়াই! এর ফলে কী হচ্ছে? উৎপাদনকারীকে ঠকানো হচ্ছে। কৃষকের উৎপাদন মূল্যও দেওয়া হচ্ছে না। এমনটি চলতে থাকলে কৃষক অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। একইসঙ্গে চাষবাসেও নিরুৎসাহিত হয়ে যেতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, আমাদের কৃষকেরা রাজনীতি বোঝেন না। রাজনৈতিক দল কী, কে কার দল করে, কেন দল করতে হবে এসব তারা বোঝেন না। বোঝার চেষ্টাও হয়তো করেন না। কারও দিকেও তাকান না তারা। নিজেদের মতো করে সংগ্রাম করে যান তারা। কৃষকদের প্রয়াস থাকে, চেষ্টা করে যান কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, কীভাবে উন্নতি করা সম্ভব। কিন্তু আমরা কি সেই কৃষককে মূল্যায়িত করছি। ন্যায্য মূল্য দিচ্ছি তার শ্রম ও উৎপাদনের? মনে হয় না।
তিনি বলেন, শহরের ফিক্সড ইনকাম করেন এমন অনেক রয়েছেন। এসব মানুষের জীবনমানের উপরে একটা চাপ তৈরি হয় যদি ১০-১৫ টাকার আলু ২০-২৫ টাকা হয়ে যায়। যদি এমন হতো দরিদ্র কৃষকের আলু উৎপাদনের জন্য, তাদেরকে লাভজনক করে তুলতে ২৫ টাকা দিতে হচ্ছে তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু এখানে যদি মাঝখানের কেউ একজন টাকা হাতিয়ে নেয় তখনই তো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। আমাদের শহরগুলোর ফিক্সড ইনকাম করা মানুষগুলোও তখন ক্ষতিগ্রস্ত হন। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের সঞ্চয় চলে যায়। সততাও ধরে রাখা যায় না। তিনি আরও বলেন, কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের প্রকৃত মূল্য না পাওয়ায় ভবিষ্যতে উৎপাদনে ভূমিকা রাখবে কিনা সন্দেহের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।